বলিউডকে কেমন ভাবে ব্যবহার করেছেন নরেন্দ্র মোদী?
চারটি বিষয়ের প্রতি ভারতের সর্বস্তরের মানুষের আগ্রহ প্রবল। ক্রিকেট, রাজনীতি, ধর্ম এবং সিনেমা। ক্রিকেটের মাঠ বাদে বাকি সবক্ষেত্রই বিজেপি তাদের রাজনৈতিক মতবাদ প্রচারে ব্যবহার করেছে। হিন্দুত্বাবাদী অর্থ্যাৎ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করা। কিছু সেক্যুলার দল থাকলেও ভারতীয় জনমত কট্টরপন্থার দিকেই ক্রমশ ঝুঁকছে। কেন? কারণ, বিজেপি গণমানুষের মনস্তত্ত্বে উগ্রজাতীয়তা বাদ, ধর্মান্ধতা ইত্যাদি স্লো-পয়জনিংয়ের মত গেঁথে দিয়েছে।
রাজনীতি এবং চলচ্চিত্র দুটোই মানুষের মনস্তত্ত্বে গভীর প্রভাব ফেলে। ‘প্রোপাগান্ডা ফিল্ম’ বলে একটা কথা আছে। বাস্তবকে অস্বীকার করে নিজস্ব মতাদর্শের প্রচার। সেখানে শুধু শোসকের যুক্তিই অকাট্য, অন্য কোনকিছু গ্রাহ্য নয়।
বলিউডে বিজেপি ঠিক এই কাজটাই খুব সুন্দরভাবে করেছে এবং করে যাচ্ছে। সিনেমার কাহিনীর মাধ্যমে উগ্রবাদী রাজনীতির মহাত্ম্য, উগ্র দেশপ্রেম প্রচার করছে, মানুষের মনে এসব বিষবাষ্প ছড়িয়ে নিজেদের জায়গা পোক্ত করেছে এবং এতে যে তারা সফল তাতো দ্বিতীয় মেয়াদে বিজেপির বিশাল জয় দেখেই বোঝা যায়।
২০১৯ সালে ‘উড়ি’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরে বলিউডের এক ঝাঁক প্রথম সারির তারকা নরেন্দ্র মোদীর সাথে দেখা করেন। সেখানকার সব ছবি ব্যাপক হারে শেয়ার করে বিজেপির আইটি সেল।
তারকাদের সাথে সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহাবীর জৈন এবং মৌলিক পরিন্দু ভগৎ। মহাবীর জৈনই এক্ষেত্রে মোদী এবং বলিউডের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করেছে। আর পরিন্দু ভগৎ গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় কাল থেকে মোদীর ভোট প্রচার সঙ্গী।
এরপরেই সামনে আসে এই বৈঠকের আসল কারণ। কিছুদিন পরেই ছিল লোকসভা ভোট। নরেন্দ্র মোদী সকল বলিউড প্রথম সারির অভিনেতাদের ট্যাগ করে তাঁদের ভক্তদের ভোটে দেওয়ার আবেদন করতে বলেন। বলিউডের অভিনেতা, নির্দেশক তা করেনও।
এর আগেও মহাবীর জৈন বলিউড তারকাদের সঙ্গে মোদীর সাক্ষাৎ করিয়েছেন।
মহাবীর জৈন একবার এক সাক্ষাৎকারে মোদী সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বলিউড তারকাদের থেকে কোন সুবিধা নেননি মোদী। শুধু তাঁদের জন্যে কাজ করতে চেয়েছেন।’
কিন্তু বিভিন্ন সময় এই দাবির ঠিক উল্টো হতে দেখা গেছে। দেখা গেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতি নিয়ে প্রচার করছেন বলিউড তারকারা।
যখন সিএএ নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল তখন আরও একবার বলিউড, মোদী বৈঠক চর্চায় আসে। সেই বৈঠক থেকে ফিরে অভিনেতা, নির্দেশকরা সিএএ ইস্যুতে দেশবাসীকে ভীত না হওয়ার বার্তা দেন।
অমিত মালব্যকে উড়ির প্রচারের অংশ একটি ভিডিও টুইট করতে দেখা যায়। যেখানে বলিউড তারকারা ভিডিওর শেষে একসাথে জয় হিন্দ বলছেন। তাকেও বিজেপি নিজেদের দলের প্রচারের অঙ্গ করে নেয়। মালব্য লেখেন, এর আগে কখনও বলিউড তারকাদের এত জোড়ে জয় হিন্দ বলতে শুনেছেন? এটি চার বছরের পরিবর্তনের ফল।