আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘জওয়াদ-এর সঙ্কট থেকে বাঁচতে রাজ্যে কৃষিক্ষেত্রে তোড়জোড় শুরু

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘জওয়াদ’। শনিবার ভোরে সেটি দক্ষিণ ওড়িশা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। এর জেরে শনি ও রবিবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে মাঝারি থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। শনিবার থেকেই সমুদ্র উত্তাল হবে। ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো বাতাস। আসন্ন দুর্যোগে দক্ষিণবঙ্গের কৃষিক্ষেত্র বড়সড় সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে। তাই বুধবার থেকেই প্রশাসন দুর্যোগের প্রস্তুতির পাশাপাশি চাষিদের জন্য নানা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। এই সময় মাঠে পাকা আমন ধান, কোথাও সবে বসানো হচ্ছে আলুবীজ। শীতের সব্জিতে মাঠ ভরে রয়েছে। ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাত ব্যাপক ক্ষতি করে দিতে পারে এই ফসলের। তাই দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি জেলায় কৃষকদের একাধিক পরামর্শ দিয়েছে কৃষিদপ্তর। ধান কাটা হয়ে গেলে তা মাঠে ফেলে না রেখে দ্রুত গোলাজাত করতে বলা হয়েছে। সব্জির খেতে জল জমে যাওয়া ঠেকাতে নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হুগলি, বর্ধমানের বিস্তীর্ণ অংশে এখন আলুবীজ বসানোর কাজ চলছে। যাঁরা এখনও আলুবীজ বসাননি, তাঁদের কয়েকদিন অপেক্ষা করে যেতে প্রচার চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে উপকূল অঞ্চল থেকে মানুষকে নিরাপদ এলাকায় সরানোর কাজও চলছে।
রাজ্য সরকারের কৃষিদপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা ডঃ পার্থ রায়চৌধুরী বলেন, কৃষকরা ধান গোলায় তুলে নিতে পারলেই সবচেয়ে ভালো। ধান কেটে মাঠে ফেলে রাখা যাবে না। সব্জি ও আলু খেতে যাতে জল না জমে যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। দুর্যোগ কেটে গেলে ফসলে ছত্রাকের আক্রমণ বাড়বে। তখন ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের অন্যতম কর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই দুর্যোগ খুব ভয়ানক হবে বলে এখনও মনে হচ্ছে না। এখন ফসলের ভরা মরশুম বলেই দুশ্চিন্তা।
এদিকে, প্রশাসনের তরফে সতর্কতামূলক প্রচারের পরই জেলাগুলিতে আমন ধান তোলার কাজ শুরু হয়ে যায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। বুধবার থেকে পূর্ব মেদিনীপুরে কৃষিদপ্তর প্রতিটি ব্লকে মাইকিং শুরু করে। আলুবীজ বসানোর কাজ অন্তত এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিতে প্রচার চলছে। জেলা কৃষিদপ্তরের সহ অধিকর্তা (শস্য সুরক্ষা) মৃণালকান্তি বেরা বলেন, প্রায় ৬০ শতাংশ আমন ধান গোলায় উঠেছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যাঁরা আলু লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, তাঁদের এক সপ্তাহ পিছনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সব্জির মাচা, পানের বরজ শক্ত করে বাঁধতে হবে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, প্রায় ৫৫ শতাংশ জমির ধান উঠে গিয়েছে। বারুইপুর, ক্যানিংয়ে বেশিরভাগ জমির ধান উঠে গেলেও ডায়মন্ডহারবার ও কাকদ্বীপ মহকুমা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় প্রায় ৯০ শতাংশ জমির ধানই উঠে গিয়েছে।
তবে জেলার প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষ হয়েছে। এই জেলায় সব্জি চাষও হয় অনেক। তাঁরা বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। হুগলিতেও বেশিরভাগ জমি থেকে ধান উঠে গিয়েছে। কিন্তু আলু, তৈলবীজ ও সব্জির জন্য সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে কৃষকদের। হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুর ব্লকে প্রশাসন দ্রুত ধান কাটার জন্য মেশিন ব্যবস্থা করে দিয়েছে।