লক্ষ্য ২০২৩! নতুন বছরে একাধিক কর্মসূচী নিয়ে ফের ত্রিপুরায় ঝাঁপাবে তৃণমূল
লক্ষ্য ২০২৩ এর বিধানসভা নির্বাচন। নতুন বছরের শুরু থেকেই বিধানসভা ভোটে ভাল ফলের লক্ষ্যে ত্রিপুরায় ঝাঁপাতে চলেছে তৃণমূল। আগামী ৫ জানুয়ারি ত্রিপুরা রাজভবন অভিযানের ডাক দিল ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেস (Tripura TMC)। আইন শৃঙ্খলা থেকে কর্ম সংস্থান-সহ একাধিক ইস্যুতে ত্রিপুরায় আন্দোলন শুরু করছে জোড়া ফুল শিবির। ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ১৫ দফা দাবিতে রাজভবন অভিযান। আগামী ৫ই জানুয়ারি ২০২২ বুধবার ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ১৫ দফা দাবিতে রাজভবন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে দলমত নির্বিশষে।
পনেরো দফা দাবিকে সামনে রেখে সকাল ১১ টার সময় বিবেকানন্দ ময়দানের সামনে জমায়েত করা হবে। যে যে ইস্যুতে তারা রাজভবন অভিযান (Tripura TMC) করবেন সেগুলি হল, রাজ্যের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি, প্রতিনিয়ত মহিলা নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, ব্যাপকহারে বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট, বিরোধীদলের কর্মী নেতাদের উপর আক্রমণ, তৃণমূল কাৰ্য্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া, সংবাদপত্রের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া, সাংবাদিক নিগ্রহ এবং সাধারণ জনগণের উপর প্রতিনিয়ত হামলা ও হেনস্থা তথা বাইক বাহিনীর দৌরাত্ম। এই সমস্ত ইস্যুর প্রতিবাদে এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই অভিযান বলে জানিয়েছেন ত্রিপুরা তৃণমূলের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক।
তৃণমূলের (Tripura TMC) অভিযোগ পৌর নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করতে ছাপ্পা ভোট, বুথ দখল, প্রার্থীসহ ভোটারদের ভোট দিতে না দেওয়া, প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের উপর ভয়ঙ্কর আক্রমণ–এইসব কাজে জড়িত দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই পথে হাঁটবে তৃণমূল। সুবল বাবু জানিয়েছেন, এই রাজ্যে শিল্প কারখানা নেই, রোজগারের সুযোগ নেই, রাজ্যবাসী সরকারি চাকুরির উপর নির্ভরশীল তাই অবিলম্বে সমস্ত সরকারি শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। বিগত চার বছর নিয়োগ প্রায় বন্ধ, বেসরকারি সংস্থাকে কর্মী নিয়োগের বরাত দিয়ে রাজ্যের বেকারদের ভাতে মেরে বাইরের রাজ্যের প্রার্থীদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ অফিসকে বিকলাঙ্গ করে বাইরের রাজ্যের বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ নিশ্চয়ই স্বচ্ছতার স্বাক্ষর বহন করে না।
আবগারি থেকে শুরু করে বিদ্যুত বিভাগ সহ বিভিন্ন ব্যবসায় বাইরের রাজ্যের অধিবাসীদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের লক্ষাধিক বেকার যুবক-যুবতীদের বঞ্চনা করে অথচ রাজ্যের হাজার হাজার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য কন্ট্রাক্ট ওয়ার্কের ডিড করা স্বত্বেও আজ পর্যন্ত কেউ সরকারি দফতর থেকে কোনো কাজ পায়নি বলে অভিযোগ করছেন তিনি। অবিলম্বে রাজ্যের বেকারদের জন্য সরকারী চাকুরি বা অন্যভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অথবা তাদের বেকার ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে এবং রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতিদের বঞ্চনা করে বাইরের রাজ্যের অধিবাসীদের সুযোগ করে দেওয়া বন্ধ করতে হবে এই দাবিতে রাজভবন অভিযান হবে।
সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী REGA মজুরি দ্বিগুণ করতে হবে এবং REGA কাজ ন্যূনতম ২০০ দিনের করতে হবে, সমস্ত অনিয়মিত কর্মচারীকে অবিলম্বে নিয়মিতকরণ করতে হবে বলেও দাবি তোলা হয়েছে। প্রায় ১৮০০০ অঙ্গনওয়ারী কর্মী ও সহায়কদের এবং পাশাপাশি আশাকর্মীদের ও নিয়মিতকরণ করে বেতন-ভাতা প্রদান করতে হবে এই দাবিও রাখছে তৃণমূল।
প্রাক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১০৩২৩ জন চাকুরীচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মানপূর্বক চাকুরী ফিরিয়ে দিতে হবে বা বিকল্প সরকারী চাকুরি দিতে হবে এবং প্রয়াত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরিবারে একটি করে সরকারী চাকুরি দিতে হবে এই দাবি তোলা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য বিদ্যুত দফতরের তুঘলকি রাজ বন্ধ করতে হবে এবং বেসরকারীকরণ রোধ করতে হবে বলেও দাবি তুলেছেন তাঁরা। তাদের বক্তব্য, নিয়ম বহির্ভূতভাবে অধিক মাশুল চাপিয়ে অযথা হয়রানি বন্ধ করতে হবে ও বিদ্যুত মাশুল ৫০% কমিয়ে আনতে হবে। সারা রাজ্যে বিশেষ করে গ্রামীন সড়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। ধর্মনগর থেকে আগরতলা জাতীয় সড়কের কাজ অবিলম্বে সম্পূর্ণ করতে হবে এবং নিম্নমানের কাজের জন্য দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাশাপাশি রাজ্যের পরবর্তী প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করে শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য ও দুর্নীতি রোধের জন্য শিক্ষা মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে তৃণমূল। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বেসরকারী হাসপাতালে রোগী রেফার করে অনৈতিক কাজ চলছে বলেও অভিযোগ। এরকমই একাধিক দাবি নিয়ে রাজভবন অভিযান করবে তৃণমূল কংগ্রেস।