ডিজিটাল মুদ্রা: খায় না মাথায় দেয়?
মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, এবার ভারতের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা হতে চলেছে। RBI-এর তরফে এই মুদ্রা আনা হবে। কিন্তু এই ডিজিটাল মুদ্রা সাধারণ মানুষ কীভাবে ব্যবহার করতে পারবেন? তাঁদের কী ধরনের কাজে লাগবে? কতটাই বা সুবিধা হবে? এই প্রশ্নগুলি উঠেছে।
এবারের শীতকালীন অধিবেশনই লোকসভায় Cryptocurrency এবং Official Digital Currency Bill, 2021 নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। কয়েক মাস আগেই Reserve Bank of India (RBI)-র তরফে প্রস্তাব করা হয়েছিল ‘ব্যাঙ্ক নোট’-এর সংজ্ঞা বদলানোর সময় এসেছে এবং ডিজিটাল মুদ্রাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসেছে। স্পষ্ট ইঙ্গিতই ছিল সরকার central bank digital currency (CBDC) নিয়ে আসতে চলেছে।
কী এই ডিজিটাল মুদ্রা বা central bank digital currency (CBDC)?
দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক (ভারতের ক্ষেত্রে RBI)-এ তরফে যে ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে ছাড়া হয়, তাকে central bank digital currency (CBDC) বলা হয়। ইতিমধ্যেই বিটকয়েন, ম্যাটিক, ইথেরিয়ামের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে বাজারে। বহু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তরফে ডিজিটাল কারেন্সিও রয়েছে। কিন্তু এত দিন ভারতের এমন কোনও মুদ্রা ছিল না। সেটিই এবার আসছে।
সহজ বাংলায় বলতে গেলে, এখন থেকে দু’ধরনের টাকা হবে। একটি ছাপা কাগজে। অন্যটি ডিজিটাল মাধ্যমে। দু’টি দিয়েই একই ধরনের কাজ করা যাবে।
ডিজিটাল কারেন্সি আর ক্রিপ্টোকারেন্সির পার্থক্য কী?
অনেক দিন ধরেই ডিজিটাল মাধ্যমে বেশ কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি জোরদার ভাবে রয়েছে। বিটকয়েন, ম্যাটিক, ইথেরিয়ামের মতো কারেন্সি অনেকেই ব্যবহার করেন। এগুলির সঙ্গে ডিজিটাল কারেন্সি বা central bank digital currency (CBDC)-র প্রধান পার্থক্য হল ক্রিপ্টোকারেন্সি মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু central bank digital currency (CBDC) দেশীয় সরকার দ্বারা বা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল মুদ্রা।
ডিজিটাল কারেন্সি আর ই-মুদ্রা বা ই-ওয়ালেটে রাখা মুদ্রার পার্থক্য কী?
অনলাইনে তো নিত্যই টাকা পয়সার লেনদেন চলে। অনলাইনে জিনিসপত্র কেনাকাটা করতেও অনেকেই ই-ওয়ালেটে রাখা টাকা ব্যবহার করেন। তার সঙ্গে এই ডিজিটাল মুদ্রার পার্থক্য কী হবে? প্রথম পার্থক্যই হল, ই-ওয়ালেটে রাখা টাকার নিজস্ব কোনও মূল্য নেই। ওটি পুরোপুরি নির্দিষ্ট মুদ্রাটির মূল্যের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম যা, ই-ওয়ালেটে রাখা টাকার দামও তাই। একই রকম ভাবে ই-ওয়ালেটে থাকা ইউরো বা আমেরিকান ডলারের দামও কাগজে ছাপা ইউরো বা ডলারের দামের সমান। কিন্তু ডিজিটাল মুদ্রার নিজস্ব দাম থাকবে। সেটি টাকার দামের উপর নির্ভরশীল হবে না।
সহজ কথায়, সব ডিজিটাল মুদ্রাই ই-মুদ্রা। কিন্তু সব ই-মুদ্রা বা ই-ওয়ালেটে রাখা অর্থ ডিজিটাল মুদ্রা নয়।
কেন RBI এই মুদ্রা চালু করতে আগ্রহী?
ইতিমধ্যেই বহু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেছেন। সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এই দৌড়ে অনেকের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। চিনও হালে জোর দিয়েছে ডিজিটাল মুদ্রায়। আগামী দিনে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির মুদ্রা আন্তর্জাতিক বাজারের অনেকটা দখল করতে চলেছে বলে আন্দাজ। এই অবস্থায় RBI যদি ডিজিটাল মুদ্রার কথা না ভাবে, তাহলে দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের।
সাধারণ মানুষের কী সুবিধা হবে?
সাধারণ মানুষ এই ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করে সবই ধরনের অনলাইন পেমেন্ট করতে পারবেন।
- অনলাইনে কেনাকাটা এই মুদ্রায় একই রকমভাবে করা যাবে।
- যেহেতু এটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের থেকে দেওয়া ডিজিটাল মুদ্রা, তাই এটি যে কোনও সময়ে ছাপা টাকায় বদল করে নেওয়া যাবে ব্যাঙ্ক থেকে। শুধু ওই মুহূর্তে দু’টির দাম কেমন রয়েছে, সেটি দেখে নিতে হবে। তার অনুপাতের ভিত্তিতে টাকা বদল করা যাবে।
- কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তরফে ইস্যু করা বলে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নেই।
- বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের বিলও মেটানো যাবে এ দিয়ে।
- আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে এতে। যাঁরা বিদেশের সঙ্গে নানা জিনিস আমদানি রফতানি করেন, তাঁদের দাম হিসাব করতে সুবিধা হবে।