সুদ কমল পেমেন্টস ব্যাংকের, শঙ্কায় গ্রাহকরা
দেড় লক্ষ পোস্ট অফিসকে কোর ব্যাঙ্কিংয়ের আওতায় আনার কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মঙ্গলবার বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০২২ সালের মধ্যেই ডাকঘরগুলি কোর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেবে। এর ফলে ডাকঘরের গ্রাহকরা অন্যান্য ব্যাঙ্কে অনলাইনে টাকা পাঠাতে, নেট ব্যাঙ্কিং বা এটিএম ব্যবহার করতে পারবেন। প্রান্তিক এলাকার কৃষক থেকে শুরু করে প্রবীণ নাগরিকরা এতে বিশেষ উপকৃত হবেন বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তিনি যেদিন এই ঘোষণা করলেন, সেদিনই ডাক বিভাগের আওতায় থাকা ইন্ডিয়ান পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্ক বা আইপিপিবি সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার ০.২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাল। কমে তা হল বার্ষিক ২.২৫ শতাংশ। কয়েক মাস অন্তর এভাবে সুদ কমানোয় রীতিমতো ক্ষুদ্ধ গ্রাহক। তাঁদের প্রশ্ন, একদিকে যেমন আইপিপিবি’তে সুদ কমছে, অন্যদিকে লিঙ্ক না থাকার কারণে পোস্ট অফিসের কাজে নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যেখানে অল্প সংখ্যক ডাকঘরে কোর ব্যাঙ্কিং চালু রাখতেই কেন্দ্রের নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে সারা দেশে সেই পরিষেবা চালু হলে পরিস্থিতি কী হবে, সেই আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলে ৪৭টি হেড পোস্ট অফিস রয়েছে, যেগুলিতে কোর ব্যাঙ্কিং চালু আছে। মোট সাব পোস্ট অফিসের সংখ্যা ১ হাজার ৭২৩টি, যার মধ্যে ১৯টিতে সিবিএস নেই। অন্যদিকে, ৭ হাজার ৩০৮টি শাখা পোস্ট অফিসে সরাসরি কোর ব্যাঙ্কিং চালু নেই। ডাক বিভাগের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের প্রাক্তন চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৬ সালে ডাক বিভাগে কোর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা বা সিবিএস চালু হয়। গোটা দেশে একযোগে কোর ব্যঙ্কিংয়ের পরিকাঠামো গড়া সম্ভব নয়। ২০২০ সালের মধ্যে বড় পোস্ট অফিস ও সাব পোস্ট অফিসগুলি মিলিয়ে ৮৫ শতাংশ জায়গায় সেই পরিষেবা চালু হয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে অধিকাংশ শাখা বা ব্রাঞ্চ পোস্ট অফিসগুলিতে ‘দর্পণ’ স্কিমের আওতায় একটি করে ডিভাইস বা যন্ত্র দেওয়া হয় ডাক কর্মীদের। সেগুলির সঙ্গে সরাসরি কোর ব্যাঙ্কিং-যুক্ত ডাকঘরের সংযোগ আছে। ডিভাইসটির মাধ্যমে অনলাইনে লেনদেন করতে পারেন গ্রাহকররা। এই সামগ্রিক পরিকাঠামো এখন এমন জায়গায় এসেছে, যেখানে সরকার চলতি বছরের মধ্যেই দেড় লক্ষ পোস্ট অফিসে কোর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু করার কথা ঘোষণা করতে পারছে। যেহেতু পোস্ট অফিস রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আওতায় নয়, ব্যাঙ্কের সঙ্গে সরাসরি লেনদেনের সুযোগ এতদিন গ্রাহকের ছিল না। সরকার সেই প্রশাসনিক কাজটিই করবে, যেখানে ওই সুবিধা পাবেন গ্রাহক।
তবে আদৌ সেই কাজ সুষ্ঠুভাবে হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রাহকরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রায় প্রতিটি পোস্ট অফিসেই লিঙ্ক না থাকার সমস্যা জাঁকিয়ে বসছে। তার ফল ভুগতে হচ্ছে গ্রাহককে। তাই কোর ব্যাঙ্কিংয়ের পরিধি বাড়ালে সমস্যা আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
এদিকে ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্ক ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সুদের হার ২.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেছে। এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ডিপোজিটে সেই সুদ মিলবে। দুই লক্ষ পর্যন্ত জমা করা টাকায় মিলবে ২.৫ শতাংশ সুদ। সর্বোচ্চ দুই লক্ষ টাকা রাখা যায় আইপিপিবি’তে। তাঁদের বক্তব্য, ১ জানুয়ারি থেকেই এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়েছে এই ব্যাঙ্কে টাকা রাখার খরচ। তার উপর সুদ কমানো হল। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মোটেই গ্রাহকমুখী নয়।