বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

কাকাবাবু: আফ্রিকার ভয়ঙ্কর সুন্দর প্রেক্ষাপটে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন

February 11, 2022 | 3 min read

অগ্নিভ নিয়োগী

সালটা ২০২০। মার্চ মাস। বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক। এক অজানা রোগের আগমনে সন্ত্রস্ত মানব জাতি। একের পর এক বন্ধ হচ্ছে বিভিন্ন দেশের দরজা। শৃঙ্খলে বাঁধা হচ্ছে সামাজিক জীবনকে। এই বিভ্রান্তিকর পরিবেশে আফ্রিকায় নির্মাণরত কাকাবাবু সিরিজের তৃতীয় ছবি। তড়িঘড়ি দেশে ফিরে নিভৃতবাসে যেতে হল পরিচালক, কলাকুশলীদের। অতিমারীর প্রকোপে পেছোতে থাকে ছবির মুক্তি। অবশেষে তিন তিনটে ঢেউ অতিক্রম করে ২০২২ এর সরস্বতী পুজোয় প্রত্যাবর্তন হল বাঙালির অতিপ্রিয় চরিত্রের। প্রত্যাশার পারদ গগনচুম্বী, বিধিনিষেধের গেরোয় অনিশ্চয়তার আবহ। এরই মাঝে আফ্রিকার ভয়ঙ্কর সুন্দর প্রেক্ষাপটে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন রাজা রায়চৌধুরীর।

Kakababur Protyaborton: Kakababur Protyaborton Shows Does A Good Business  In Box Office, Said Mahidra Soni | Kakababur Protyaborton: ৩ দিনে ১ কোটির  ব্যবসা! 'কাকাবাবু'-র সাফল্যে ট্যুইট উচ্ছ্বসিত ...

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’ অবলম্বনে নির্মিত এই ছবির প্রেক্ষাপট কেনিয়ার মাসাই মারা জঙ্গল। একের পর এক পর্যটক উধাও হচ্ছে জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত হোটেল ‘লিট্ল ভাইসরয়’ থেকে। ফলত কমেছে পর্যটকদের আনাগোনা। এর সাথে কি কোনওভাবে জড়িত পশু সংরক্ষণ কর্মী হ্যারি ওটাঙ্গ-র নির্মম হত্যালীলা? ‘লিট্ল ভাইসরয়’ এর অপরূপ সৌন্দর্যের পেছনে লুকিয়ে কোন রহস্য? এমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মাসাই মারায় আবির্ভূত হন কাকাবাবু। সঙ্গী অবশ্যই সন্তু। আর ফেলুদার গল্পে যেমন থাকেন জটায়ু, সেরকমই এই গল্পে যোগ হয়েছেন জটায়ুর ডপেলগ্যাঙ্গার – অমল দত্ত। গুনরাড ওলেনের মানবজাতির ওপর রাগের নেপথ্যে কারণটা কি সেটা রহস্যই থেকে গেল (মূল গল্পে তিনি লেখক আর সৃজনশীলতার বিকাশের জন্যই নিরিবিলি পছন্দ করেন)। পাশাপাশি, হোটেলের অন্য অতিথিদের রাতে কী অসুবিধা বা অতিপ্রাকৃতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, সেটাও একটু দেখলে মন্দ হত না।

গল্পে জটায়ু-সদৃশ এক চরিত্রের যোগ হওয়াতে চিত্রনাট্যে যোগ হয়েছে এক নতুন মাত্রা। মূল গল্প থেকে আলাদা হলেও তা হয়েছে মনোগ্রাহী। সংলাপে ফেলুদা-ত্রয়ীর উল্লেখ এসেছে বারবার। এমনকি অমলবাবুকে জটায়ু সুলভ বেশ কিছু ‘ভুল’ করতেও দেখা গেছে, যা শুধরে দিয়েছেন ‘ফেলুদা’ কাকাবাবু। ‘জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত’ করেছেন কেনিয়া তথা মাসাই মারা সম্পর্কে নানা জানা-অজানা তথ্য দিয়ে। কিন্তু একবারও তা আরোপিত বা একঘেয়ে মনে হয়নি। বরং দর্শক হিসেবে নিজের ছোটোবেলাকেই যেন ফিরে পাচ্ছিলাম। বড় পর্দা হয়ে উঠছিল আমার আনন্দমেলা।

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং আরিয়ান।

তীক্ষ্ণ রসবোধ, বুদ্ধিদীপ্ত লেখনি, শব্দ নিয়ে খেলার ‘বদনাম’ সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বরাবরের। কাকাবাবুর এই নতুন অ্যাডভেঞ্চারেও তার অন্যথা হয়নি। বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে সংলাপকে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত করে তুলেছেন তিনি। আর সৃজিত-সুলভ ভঙ্গিতে চিত্রনাট্যে মোক্ষম কোপটিও মেরেছেন (আফ্রিকার) ঝোপ বুঝে। কাকাবাবুর গল্পের অ্যাপিল তার সারল্যে। আর এই ছবিতে তাই তুলে ধরেছেন পরিচালক। আফ্রিকার জঙ্গলের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন ক্যামেরায়। ছবির দৃশ্য নির্মাণ চমৎকার। চোখের আরাম হয়। কাকাবাবুর হাত ধরে আমাদেরও আফ্রিকা ভ্রমণ হয়। অবশ্যই তারিফের যোগ্য ছবির ভিএফএক্স। ক্লাইম্যাক্সে ‘দ্য গ্রেট মাইগ্রেশন’ দৃশ্যায়িত করা সহজ নয়। কোনটা ক্যামেরায় তোলা ছবি আর কোনটা গ্রাফিক্স বোঝাই যাচ্ছিল না। অসামান্য।

আসা যাক অভিনয়ে। পুরো অ্যাডভেঞ্চার যাকে ঘিরে সেই কাকাবাবুর চরিত্রে এত সাবলীল অভিনয় বোধহয় প্রসেনজিৎ আগের ছবিগুলোতেও করেননি। যেন তাঁকে মাথায় রেখেই লেখা হয়েছে এই চরিত্র। কাকাবাবু চরিত্রে তাঁর দাপট দৃশ্যের পরতে পরতে। আশানুরূপ ভাবে সন্তুকেও ফুটিয়ে তুলেছেন আরিয়ান। অনেক বেশি পরিণত তিনি। সন্তুর সারল্য ও ছেলেমানুষিটা খুব সুন্দর চরিত্রায়িত করেছেন তিনি সাফারির দৃশ্যগুলিতে। আর জটায়ুরূপী অমল দে-র চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী এক কথায় অনবদ্য। সরলরৈখিক এই গল্পে উনি যেন বিশুদ্ধ বাতাসের সঞ্চারণ করলেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছে পার্শ্বচরিত্রে বিদেশি অভিনেতাদের কাজ। আড়ষ্টতাবিহীন, সাবলীল অভিনয়ে নিজেদের চরিত্রকেই মেলে ধরেছেন তারা। বিশেষত ফিলিপ্স এর চরিত্রে তাফাতজোয়া ফাজেন্দা।

উৎসবের মধ্যেই মুক্তি পেল '‌কাকাবাবু প্রত্যাবর্তন'‌–এর টিজার, teaser of  kakababur protyaborton releases - Bengali Oneindia

এ তো গেল ভালো কথা। তাই বলে কি এই ছবিতে গলদ নেই কোনও? অবশ্যই আছে। যেমন অযথা বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন – সেই চকোলেটই হোক বা বিস্কুট। অনেকের গল্পের ছন্দ পছন্দ নাও হতে পারে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, কাকাবাবুর চির-পরিচিত থ্রিলটা যেন মিসিং (যদিও মূল গল্পের তুলনায় অনেকাংশে বেশি রোমাঞ্চ যোগ করেছেন পরিচালক)। আরেকটা ব্যাপার বিশ্বাসযোগ্য একদম মনে হয়নি – তা হল কাকাবাবু-সন্তুর পায়ে হেঁটে মাসাই মারা পরিক্রমণ করার সময় রাতে আগুন জ্বালিয়ে গুহায় থাকাটা। জঙ্গলে সাপের সাথে এনকাউন্টারটাও মেকি লেগেছে।

এইরকম একটা দুটো খামতি উপেক্ষা করলে, না বলে উপায় নেই, রাজার মুকুটে এই নতুন পালক শোভা বাড়াচ্ছে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির। এই স্কেলের কাজ করার সৎ-সাহস যে পরিচালক-প্রযোজক দেখিয়েছেন এটাই পাওনা। এই লার্জার দ্যান লাইফ ছবি বড়পর্দায় না দেখালে মিস। ভবিষ্যতে বড়পর্দায় কাকাবাবুর ফেরার ইচ্ছা জাগ্রত হোক, এমনটাই আশা থাকবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Srijit Mukherjee, #SVF, #Prosenjit Chatterjee, #Kakababur Protyaborton, #Aryann Bhowmik

আরো দেখুন