রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বঙ্গতনয়ার মুকুটে নয়া পালক! ফিউচার ফর নেচার অ্যাওয়ার্ড পেলেন পরিবেশকর্মী তিয়াসা

March 20, 2022 | 2 min read

আচ্ছা বলতে পারেন পশ্চিমবাংলার রাজ্য প্রাণী কী? উত্তর ভারী সোজা! মেছো বিড়াল। সেই মেছো বিড়ালদের বাঁচিয়েই বিশ্ব বন্দিত হয়েছেন বঙ্গতনয়া তিয়াসা। বিপন্ন এই বন্যপ্রানী ও তার প্রকৃতিক বাসস্থান সংরক্ষণের স্বীকৃতি পেলেন তিয়াসা আঢ্য। বছর ৩৫ এর তিয়াসা, মেছো বিড়াল প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা। মেছো বিড়াল সংরক্ষনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন তিয়াসা, তাঁর কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি স্বরূপ ফিউচার ফর নেচার অ্যাওয়ার্ড, ২০২২ পেলেন তিনি। প্রতি বছর ৩৫ বছর বয়সী তিন জনকে বন্যপ্রাণ সংরক্ষনে অনন্য নজির স্থাপন করার জন্য এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।

ফিউচার ফাউন্ডেশন ফর নেচার, হল নেদারল্যান্ডের একটি সংস্থা। তাদের ওয়েবসাইট মারফত জানা গিয়েছে, সংরক্ষণবিদ তিয়াসা মেছো বিড়াল এবং তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান জলাভূমি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। তিয়াসা, তাঁর ফিশিং ক্যাট প্রজেক্টের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষজন, গবেষক এবং সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে মেছো বিড়ালদের রক্ষা করছে। সেই সঙ্গে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যও বজায় থাকছে।

তিয়াসার সঙ্গে এ বছরের অন্য দুই বিজয়ী হলেন, ৩৪ দোল বয়সী ব্রাজিলের গ্যাবরিয়েল ম্যাসোকাটো এবং ব্রিটিশ জীববিদ ৩১ বছর বয়সী রেবেকা ক্লিফ। গ্যাবরিয়েল জায়েন্ট আর্মাডিলো নিয়ে কাজ করেন। বিশ্ব জুড়ে ২৫০ জন সংরক্ষণবিদদের মধ্যে তিনজনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে তারা অ্যাওয়ার্ড এবং ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪২ টাকা করে পাবেন।

তিয়াসা এই মুহূর্তে উড়িষ্যার চিল্কায় রয়েছেন, মেছো বিড়ালদের নিয়েই কাজ করছেন। পুরস্কার প্রাপ্তির খবর শুনে এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, “এটা কোন ব্যাক্তিগত স্বীকৃতি নয়। এটা মেছো বিড়াল ও তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান জলাভূমির বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি।” তিনি আরও যোগ করেছেন, “জলাভূমি আমাদের খাবার সরবরাহকারী সুপার মার্কেট, জল সংরক্ষণকারী জলাধার, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষা প্রদান করে। যদি আজ মেছো বিড়াল ভয়ানকভাবে বিপন্ন হয়, তার মানে আমরা খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছি। যেকোন মুহূর্তে পড়ে যেতে পারি।”

প্রসঙ্গত, বাঘরোল বা মেছো বিড়াল, ১৯৭২ সালের ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় সিডিউল একের অন্তর্ভুক্ত। মেছো বিড়ালকে মারা দন্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে শাস্তিও রয়েছে; তিন থেকে সাত বছরের জেল এবং ৩০,০০০ টাকার পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা হয়। ২০২০ সালের মে মাস থেকে এ পর্যন্ত বাংলার নানান প্রান্তে কমপক্ষে এক ডজনেরও বেশি মেছো বিড়াল মেরে ফেলা হয়েছে।

মেছো বিড়াল জলাভূমিতে থাকে, এরা নিশাচর এবং এরা জলাভূমি থেকে মাছ ধরে খায়। সাধারণ বিড়ালের তুলনায় এরা আয়তনে দ্বিগুণ হয়। এদের ওজন প্রায় ১৫ কেজি। এদের দেহ ছোপ ও দাগযুক্ত হয়। গায়ে দাগ থাকায় অনেকেই একে লেপার্ড বা বাঘের বাচ্চা ভেবে ফেলে এবং ভয় পায়। যাদের গবাদিপশু-পোল্ট্রিফার্ম রয়েছে; সে’সব মানুষ-জন মেছো বিড়ালকে বাঘ ভেবে ভয় পায়। এভাবেই আতঙ্ক ছড়ায় এবং মেছো বিড়ালদের মেরে ফেলে। তিয়াসা আঢ্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যায় স্নাতক। বর্তমানে তিয়াসা ব্যাঙ্গালুরুর ট্রান্স ডিসিপ্লিনারি হেলথ সায়েন্স’স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষক। তিনি বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মেছো বিড়াল সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করছেন। দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তার কাজ চলছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ​মেছো বিড়ালের ভূমিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছেন তিনি। মেছো বিড়ালদের যাতে আক্রমণ না করা হয়, তাই নিয়মিত সচেতনামূলক প্রচার করেন তিয়াসা।

ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশনের তরফে জানা গিয়েছে, আগামী ১৩ই মে নেদারল্যান্ডে তিয়াসাদের সম্মাননা প্রদান করা হবে এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্যি কনজারভেশন অফ নেচারের নবনির্বাচিত সভাপতি, রাজান আল মুবারক ও ইউরোপিয়ান কমিশনের সহসভাপতি ফ্রান্স টিমমেরমান্স, ওই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের সম্মানীয় অথিতির পদ অলংকৃত করবেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Future for Nature award, #Tiasa Adhya

আরো দেখুন