কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

বাংলার নিজস্ব গয়নার ডিজাইন ‘কলকাত্তি’ – জিআই আবেদন রাজ্যের

April 26, 2022 | 2 min read

ছবি সৌজন্যে: বর্তমান

উত্তর কলকাতার গরাণহাটার ২০ নম্বর ফকির চক্রবর্তী লেন। একচিলতে ঘরে বসে গয়নায় নকশা তুলতেন নরেশ রায়। হার, দুলের পাশাপাশি তাঁর নামডাক ছিল ‘গোলাপফুল বালা’ তৈরিতে। বালার গায়ে গোলাপের কারুকাজে চোখ রাখলে, যে কেউ অবাক বনে যেতেন। গয়নার বরাত আসত দূর-দূরান্ত থেকে। নরেশবাবুর মতোই বিবেকানন্দ রোডের কাছাকাছি রমেশ মালাকার কিংবা হুগলি থেকে কলকাতায় আসা সাধন শী’দের কথা ভুলতে পারেন না এখনকার কারিগররা। যুগের পর যুগ ধরে এমনই সব শিল্পী বনেদি বাড়ির গয়না তৈরিতে সৃজনশীলতা দেখিয়েছেন। সেই পরম্পরা আজও চলছে। মা-ঠাকুমাদের গয়নার বাক্স খুললে যে মানতাসা, সাত নরি হার, পাতি হার, রতনচূড় বা মিনাকারির হাঙরমুখ বালা ঝিলিক দেয়, তার সঙ্গে মিশে আছে বাঙালি কারিগরদের মেধা, দক্ষতা, শিল্পীসত্তা ও পরিশ্রম। এবার সেই কারুশিল্পের সত্ত্ব নিজের হাতে নিতে চাইছে বাঙালি। সেইসব গয়নার ডিজাইনের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই’য়ের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ‘কলকাত্তি’ গয়নার তকমা পেতে চায় বাঙালির নিজস্ব ঘরানা।


কেন আলাদা করে জিআইয়ের প্রয়োজন? বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগরচন্দ্র পোদ্দার বলেন, ‘বাংলার বাইরে  মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু সহ নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছেন হাজার হাজার বাঙালি কারিগর। তাঁরা নিজেদের দক্ষতায় যে গয়নার নকশা করছেন, তাকেই বড় বড় সংস্থা ‘কলকাত্তি’ গয়না তকমা দিয়ে রপ্তানি করছে। আরব বা ইউরোপের দেশগুলিতে এর চাহিদা অপরিসীম। অল্প সোনায় নিখুঁত কাজই এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অথচ কলকাতা তার আসল কদর পাচ্ছে না। এখানকার অনেক প্রবীণ ও দক্ষ কারিগর এখন বসে আছেন কাজের অভাবে। এই শহর থেকেই গয়নার নকশাগুলির জন্ম। অথচ কলকাতার নাম সামনে রেখে অন্যান্য রাজ্য থেকে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে বিশ্বে। তা আটকতেই আমরা জিআই চাইছি। সেই স্বীকৃতি পাওয়া গেলে কলকাতায় গয়নার রপ্তানির বহর বাড়বে।’ টগরবাবুর আশা, এর ফলে ভিন রাজ্য থেকে কলকাতার নাম ভাঙিয়ে গয়নার রপ্তানির চক্রান্তও বন্ধ হবে। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির পাশাপাশি ‘কলকাত্তি’ গয়নার জিআই স্বীকৃতির জন্য একযোগে আবেদন করেছে জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলও। গত ১৯ এপ্রিল জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রিতে আবেদন করা হয়েছে জিআইয়ের জন্য। এগুলি কলকাতারই নকশা, তার যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে মিলবে জিআই। প্রসঙ্গত, কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চলে যদি কোনও বিশেষ দ্রব্য পাওয়া যায় বা উৎপাদিত হয়, তাহলে ওই অঞ্চলের নাম জড়িয়ে সেই পণ্যটির জিআই তকমা মেলে। তাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সুবিধা পায় ওই পণ্য। ঠিক যেমন দার্জিলিং চা বা জয়নগরের মোয়া। এবার পালা ‘কলকাত্তি’ গয়নার…।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#WestBengal, #jwellery, #GI Tag, #kolkatti design

আরো দেখুন