পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

হাজার বছর অতিক্রম করে বিষ্ণুপুরে মল্লরাজাদের দুর্গাপুজো

October 2, 2022 | 2 min read

বিষ্ণুপুরে মল্লরাজাদের প্রাচীন রীতি ও ঐতিহ্য মেনে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মল্লরাজবাড়ির দুর্গোৎসব চলে টানা ১৮ দিন ধরে। ‘পট পুজো’ এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিষ্ণুপুর শহরের শাঁখারি বাজার এলাকার ফৌজদার পরিবার ঐতিহ্য মেনে আজও প্রতি বছর যথাক্রমে বড় ঠাকুরাণী, মেজ ঠাকুরাণী ও ছোট ঠাকুরাণীর জন্য পৃথক তিনটি পট আঁকেন। মন্দিরে মৃন্ময়ী প্রতিমার পাশেই নির্দিষ্ট জায়গায় এই তিনটি পট রেখে পুজো করা হয়।

নবম্যাদি কল্প থেকে বড় ঠাকুরাণী অর্থাৎ দেবী মহালক্ষীর পুজো আরম্ভ হয়। রাজবাড়ি সংলগ্ন রঘুনাথ সায়রে (পুকুর) বড়ঠাকুরাণীর পটের স্নান পর্বশেষে মন্দিরে প্রবেশের পর প্রথা অনুসারে তিন বার তোপধ্বণী দেওয়া হয়। এরপরে গর্ভগৃহে প্রবেশের সময়তেও তোপধ্বণী দেওয়া হয়। আবার দেবীকে অন্নভোগ নিবেদন করার সময় আরো তিনবার তোপধ্বণী দেওয়া হয়। বড় ঠাকুরাণীর পুজোর দিন থেকেই মল্ল রাজাদের শারদোৎসবের সূচণা হয়ে যায়। দেবী পক্ষের চতুর্থীর দিন থেকে রাজপরিবারের মেজ ঠাকুরানী অর্থাৎ দেবী সরস্বতী ও সপ্তমীর দিন থেকে ছোটো ঠাকুরাণী অর্থাৎ দেবী মহাকালীর পুজো শুরু হয়। বড়, মেজো ও ছোট ঠাকুরাণী এই তিনজনকেই দেবী মহামায়ার রুপ হিসেবে মল্লরাজাদের হস্ত লিখিত বলীনারায়নী পুথি অনুযায়ী পূজিতা হন।

৯৯৭ সালে, বাংলার ৪০৪ সনে ৩০৩ মল্লাব্দে তৎকালীন রাজা জগৎ মল্ল বিষ্ণুপুরে দেবী মৃন্ময়ী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। দেবী মৃন্ময়ী মল্ল রাজাদের কূলদেবী। মল্লরাজাদের পূর্বতন রাজধানী ছিল প্রদ্যুম্নপুর। কথিত আছে রাজা জগৎ মল্ল একদিন শিকারে বেরিয়ে পথে ক্লান্ত হয়ে বিষ্ণুপুরের ঠিক মন্দিরের জায়গাতেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন তিনি দেখেন, তাঁর সঙ্গে থাকা বাজপাখির সঙ্গে একটি শ্বেতশুভ্র বাজপাখির তুমুল লড়াই হচ্ছে ও বাজপাখিটি যুদ্ধে হেরে যায়। মাতা মৃন্ময়ী রাজা জগৎ মল্লের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, তোমার মল্লভূমে আমি মৃন্ময়ী রুপে পুজিতা হতে চাই। সেই থেকে পুজো শুরু, এবার পুজো ১০২৬ বছরে পড়ল। কৃষ্ণ পক্ষের নবমী তিথিতে দেবীর বোধন হয় এবং শুক্ল পক্ষের নবমী তিথি পর্যন্ত মায়ের পুজো চলে।

একমাত্র বিষ্ণুপুর রাজ পরিবারে বলিনারায়ণী মতে দুর্গাপুজো হয়। একসময় এখানে পুজো বলি প্রথা চালু থাকলেও রাজা হাম্বির মল্ল বৈষ্ণব মতে দীক্ষা নেওয়ার পর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় বলি প্রথা। তোপধ্বণীর বিস্তর ভূমিকা রয়েছে এই পুজোতে, এই শব্দকে ব্রহ্ম হিসেবে ধরে নিয়ে সেসময় থেকেই পাহাড়ের উপর থেকে কামান দাগার প্রচলন হয়েছিলো। প্রাচীণ রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর অষ্টমীর দিন থেকেই মন্দিরের গর্ভগৃহে অষ্ট ধাতু নির্মীত বিশালাক্ষ্মী ও নবমীর রাতে খচ্চরবাহিনী দেবীর পুজো সম্পন্ন হয়। বিজয়া দশমীতে দেবী মৃন্ময়ীর ঘট বিসর্জনের পর একে একে বড় ঠাকুরাণী, মেজ ঠাকুরাণী ও ছোট ঠাকুরাণীর ঘট বিসর্জন হয়। সবশেষে এই তিন ঠাকুরাণীর পট রাজবাড়ির অন্দর মহলে নিয়ে যাওয়া হয়।
© সৌভিক রাজ

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#durga Pujo, #Dura puja 2022

আরো দেখুন