জবরদখল! বিজেপির নেতা-কর্মীরা দিল্লির অভিজাত ল্যুটিয়েনসে জাঁকিয়ে বসেছেন
কথায় বলে, অতিথি নারায়ণ। কিন্তু অতিথির বেশে আসা নারায়ণ যদি জাঁকিয়ে বসে দিনের পর দিন থাকতে শুরু করে তাহলে? এমন ঘটনাই ঘটেছে দিল্লির অভিজাত ল্যুটিয়েনস এলাকায়। সংসদে অধিবেশন চলাকালীন, এই সরকারি আবাসনে সাংসদরা ও তাঁদের অতিথিরা এসে থাকেন। সেখানেই দুর্নীতির আসর বসিয়েছে বিজেপি। বিজেপি সাংসদদের সুপারিশে বিজেপি ও সঙ্ঘের নেতা-কর্মীরা বেআইনিভাবে সেখানে দিব্যি থাকছেন। বছরের পর বছর ধরে এ জিনিস চালাচ্ছে বিজেপি। আরটিআই আন্দোলনকর্মী সাকেত গোখলে এই গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছেন।
২০১৪ সালে কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার চলে যাওয়ার পরেই রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরীকে নিউ মোতিবাগের বাংলো থেকে কার্যত ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছিল মোদী সরকার। কোভিডের কারণে সশরীরে কলকাতা থেকে দিল্লি এসে স্বর্ণজয়ন্তী সদনের সরকারি ফ্ল্যাট ছাড়তে বিলম্ব হওয়ায় তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য যোগেন চৌধুরীকে দিতে হয়েছিল ১৫ লক্ষ ৮১ হাজার ৮২৩ টাকা জরিমানা। মুকুল রায়কে ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল ১৮১ সাউথ অ্যাভিনিউয়ের বাংলো। কোপ থেকে বাদ যায়নি গান্ধী পরিবারও। সোনিয়া-কন্যাকে ২০২০ সালে বাধ্য করা হয়েছিল ৩৫ নম্বর লোধি এস্টেটের বাংলো ছাড়তে। অভিজাত এই এলাকায় ১৯৯৭ সাল থেকে থাকতেন প্রিয়াঙ্কা। কেন্দ্রে প্রায় সব সরকারের মন্ত্রী ছিলেন রামবিলাস পাসোয়ান। কিন্তু মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই ১২ জনপথের বাংলো থেকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাঁর জিনিসপত্র। এরকম আরও উদাহরণ আছে।
লোকসভার সচিবালয়ের তথ্য বলছে প্রায় ৬৫ জন বিজেপি ও সঙ্ঘের নেতা-কর্মীরা দিল্লির অভিজাত ল্যুটিয়েনস এলাকায় বেআইনিভাবে জাঁকিয়ে বসেছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেন,
১) রাম মাধব
বিজেপির উত্তর-পূর্ব ভারতে দায়িত্ব সামলানো রাম মাধব, আরএসএস-এর ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ মেম্বার। তিনি তিনটি জায়গা দখল করে আছেন। (সাউথ অ্যভিনিউয়ের টুইন ফ্ল্যাট নং ২৭-২৯, এবং SQ নং ১৫৯)
২) বিজয় চৌথিয়ালে
বিজেপির বৈদেশিক সংক্রান্ত শাখার দেখভাল করেন বিজয়। মোদীর বিদেশ সফরের সময় অনাবাসী ভারতীয়দের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজনের দায়িত্বে থাকেন বিজয়। তিনিও তিনটি ফ্ল্যাটে জাঁকিয়ে বসেছেন। (সাউথ অ্যাভিনিউয়ের টুইন ফ্ল্যাট নং ৪৩-৪৫ এবং SQ নং ৬৬)
৩) রাকেশ মিশ্র
অমিত শাহ বিজেপির সভাপতি হওয়ার পর থেকে রাকেশ, অমিত শাহের ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি দুটি ফ্ল্যাটে থাকছেন। ( নর্থ অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট নং ১৪২ এবং SQ নং ১৩৫)
৪) সূর্যকান্ত কেলকর
সূর্যকান্ত কেলকর সঙ্ঘের নেতা, তিনি আবার সঙ্ঘের ভারত রক্ষা মঞ্চের কনভেনার। তিন নম্বর ভি পি হাউসের তিন নম্বর সিঙ্গেল সুইটটি তিনি ব্যবহার করেন।
৫) এম রাধাকৃষ্ণণ
মহিলা সহকর্মীকে নিগ্রহ করার দায়ে অভিযুক্ত এই সাংবাদিক, বিজেপির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে শোনা যায়। তিনি ভি পি হাউসের ১১৭ নং সিঙ্গেল সুইট দখল করে আছেন।
৬) সুনীল বনসল
বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল ভি পি হাউসের ২১২ নং সিঙ্গেল সুইট ও SQ নং ৪ ব্যবহার করছেন।
৭) সুনীল দেওধর
সঙ্ঘের প্রাক্তন প্রচারক তথা বিজেপির বর্তমান জাতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল দেওধর, ভি পি হাউসের ৪২৩ নং সিঙ্গেল সুইটে থাকেন।
৮) রাহুল সরস্বত
বিজেপির যুব মোর্চার ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ মেম্বার রাহুল যোগীরাজ্যের বাসিন্দা হলেও, দিল্লিতে প্রাইম ল্যুটেনসে নর্থ অ্যাভিনিউয়ের ৭০ নম্বর ফ্ল্যাটটি দখল করে থাকছেন।