মঙ্গলবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল যেন দুই এলএম টেন-এর স্বপ্নপূরণের লড়াই
চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি হয়েছিল। গ্রুপ পর্বের ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। এবার বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে মঙ্গলবার রাতে মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা এবং ক্রোয়েশিয়া।
চার বছর আগে কোচ জলাতকো দালিচের চালে কার্যত বোতলবন্দি হয়ে পড়েছিলেন মেসি। কাতার বিশ্বকাপে ফের মুখোমুখি দু’দেশ। মঙ্গলবার প্রথম সেমিফাইনালে লুকা মদ্রিচদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের লক্ষ্যে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। এই লড়াইকে দুই এলএম টেনের দ্বৈরথ হিসেবে দেখছেন অনেকেই—লিওনেল মেসি বনাম লুকা মদ্রিচ।
গোলের রেকর্ডও এখন তার। চলতি বছরে দেশের জার্সিতে ১৫ বার লক্ষ্যভেদ হয়ে গেছে। অধরা বিশ্বকাপের দিকে দুরন্ত গতিতে দৌড়াচ্ছেন লিওনেল মেসি। বহু প্রতীক্ষিত ট্রফি থেকে স্রেফ ১৮০ মিনিট দূরে তিনি।
অন্যদিকে ক্রোয়াট তারকা লুকা মদরিচের কাছেও আবার বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ এসেছে। গত বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠলেও অধরা থেকে যায় স্বপ্নের বিশ্বকাপ।
মেসি’র জন্য যেমন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা প্রাণপাত করতে পিছু হাটছেন না, তেমনি মদ্রিচের জন্যও তাঁর সতীর্থরা চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছেন না। এমনিতে আর্জেন্টিনা যেমন মেসিনির্ভর, ফ্রান্স যেমন এমবাপ্পেনির্ভর দল, ক্রোয়েশিয়া পুরোপুরি তেমন নয়। নির্দিষ্ট কোনো একজন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরশীল নয় তারা। এরপরও কাতার বিশ্বকাপে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক লুকা মদরিচ।
মাঝমাঠ থেকে ক্রোয়েশিয়ার খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করেন রিয়াল মাদ্রিদের তারকা মিডফিল্ডার মদরিচই। দলকে এক সুতায় গাঁথতেও বড় ভূমিকা রাখেন। ব্রাজিলের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও পুরো মাঠজুড়ে খেলেছেন মদরিচ। এই ৩৭ বছর বয়সেও ১২০ মিনিট মদরিচ ‘বল যেখানে, তিনি সেখানে’ ধরনের ফুটবল খেলেছেন। এরপর টাইব্রেকারে পেনাল্টি শট নিয়ে গোল করেছেন।
সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচেও মদরিচের এই রূপটাই দেখতে চাইবে ক্রোয়েশিয়া। আরও একবার তিনি সেটা পারবেন বলেই মনে করেন তাঁর সতীর্থরা। মদরিচের ওপর যে অগাধ বিশ্বাস লিভাকোভিচ–পেতকোভিচদের। আর না হলে সংবাদ সম্মেলনে এসে ক্রোয়েশিয়ার ফরোয়ার্ড পেতকোভিচ বলে দেন—ব্যাংকের লকারের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করেন মদরিচকে! আর ক্রোয়েশিয়ার জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে মদরিচের অভিষেকও হয়েছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষেই! তারিখটা ১ মার্চ, ২০০৬। সুইজারল্যান্ডের বাসেলে এক প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম মাঠে নামলেন ২০ বছর বয়সী মদরিচ। লিওনেল মেসিও তখন ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে।
আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসির সামনে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার হাতছানি। ২০১৪ সালে জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে হৃদয় ভাঙে লাতিন আমেরিকার দলটির। এবারই মেসির শেষ বিশ্বকাপ।
মারাদোনা ’৮৬-তে বিশ্বকাপ এনে দিয়ে ’৯০–এ গিয়ে পারেননি। মেসি ২০১৪–তে না পেরে ২০২২ এসে আশা পূরণের খুব কাছে।মাত্র দুটি ধাপ পিছনে!
পরিসংখ্যান যাই বলুক না কেন, মঙ্গবার সেমি ফাইনাল যতোটা না আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে তার থেকে কোনও অংশে কম নয় মেসি-মদ্রিচের স্বপ্ন পূরণের লড়াই! গোটা বিশ্ব এখন অপেক্ষায় দুই এমএল টেনের লড়াই চাক্ষুস করার জন্য।