নেতাজির পছন্দের মেনুতে আজও জীবন্ত কলেজস্ট্রিটের স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল

আজ নেতাজির জন্মদিন। ভারত স্বাধীনকল্পে প্রাণ উৎসর্গ করা মহান বীরের জন্মদিন নানাভাবে পালিত হয় গোটা দেশে, পৃথিবীর নানান প্রান্তে। তবে একটু অন্যভাবে দেশনায়ককে শ্রদ্ধা জানায় ‘স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল’ । গোড়া থেকেই বলি, নেতাজি যে ভোজন রসিক ছিলেন, সেকথা সার্বজনবিদিত। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গলি দিয়ে সোজা হেঁটে গেলে, চোখে পড়বে, ‘স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল’। আদপে যা একটি পাইস হোটেল, গোদা বাংলায় বললে বসে ভাত খাওয়ার হোটেল। এই পাইস হোটেলেই এককালে খেতে আসতেন সুভাষচন্দ্র বসু। স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলের পুঁইশাকের চচ্চড়ি ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয়।
আজও তারা সে’ জিনিস মনে রেখেছেন। আজ দোকানে গেলে দেখবেন, ফুল-মালায় সেজে উঠেছে হোটেল। বহু বছরের পুরনো নেতাজির ছবিতে রজনীগন্ধার মালা পরানো হয়েছে। এদিন ক্রেতারা যাই অর্ডার দিন না কেন, তাঁদের থালার এক কোণায় থাকবে পুঁইশাকের চচ্চড়ি। পুঁইশাকের চচ্চড়ির জন্য আলাদা করে কোনও টাকা দিতে হবে না। বহু বছর ধরেই এমনটা হয়ে আসছে। প্রতি বছর নেতাজির জন্মদিনের দিন এই হোটেলে আসা সকল ক্রেতাকে বিনামূল্যে পুঁইশাকের চচ্চড়ি ও মিষ্টি দেওয়া হয়।
১৯১২ সালে কটকের মনগোবিন্দ পান্ডা এই হোটেল তৈরি করেন, যদিও সে’সময় নাম ছিল ‘হিন্দু হোটেল’। স্বাধীনতা লাভের পরেই হোটেলের নাম বদলে হল ‘স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল’। ব্রিটিশ ভারতে এই হোটেল ছিল স্বদেশীদের ডেরা। ব্রিটিশ পুলিশদের তল্লাশির সামনে একাধিকবার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মনগোবিন্দ। কটক থেকে কলকাতায় এসে হোটেল খুলেছে কেউ, শুনেই নেতাজি প্রথম এখানে এসেছিলেন। তারপর এই হোটেলের খাবারের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। অল্প দিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল হোটেল। স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলের গরম ভাত, পাতলা মাছের ঝোল আর পুঁইশাকের চচ্চড়ির স্বাদ নেতাজি কোনওদিন ভোলেননি। ১৯৩০ সালে কর্পোরেশনের মেয়র হওয়ার পরেও এই হোটেলে বসে খেয়েছিলেন তিনি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকেও এখানে খাওয়াতে নিয়ে এসেছিলেন। এখন মনগোবিন্দর তৃতীয় প্রজন্ম স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল সামলাচ্ছে। অন্তরের আবেগ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে তারা নিজেদের মতো করে নেতাজি জয়ন্তী পালন করে চলেছেন।