বিপুল বেদখলি জমি নয়, নজর নোবেলজয়ীর ১৩ শতকে; কেন অতিসক্রিয় বিশ্বভারতী?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদ করতে অতিসক্রিয় বিশ্বভারতী? উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলে বারবার বিতর্ক জড়িয়েছে শান্তিনিকেতন। অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্ক পৌঁছেছে চরমে। মাত্র ১৫ দিন সময়সীমা দেওয়া হয়েছে নোবেল জয়ীকে। পনেরো দিনের মধ্যেই জমি খালি করে দিতে হবে, অন্যথায় বলপ্রয়োগ করে উচ্ছেদ করা হবে; বুধবার এই মর্মেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে নোটিশ পাঠিয়েছিল বিশ্বভারতী। নোটিশের কথা প্রকাশ্যে আসতেই শান্তিনিকেতনে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিশ্বভারতীর বিঘার পর বিঘা জমি বেদখল হয়ে রয়েছে। কিন্তু নোবেলজয়ীর মোটে ১৩ শতক জমি নিয়ে এমন কড়া পদক্ষেপ। নানা মহল এই ঘটনায় অবাক, কেউ কেউ বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ আনছেন।
আশ্রমিক থেকে প্রাক্তনীরা, সকলেই ক্ষুব্ধ। অভিযোগ, প্রচারের থাকতে মরিয়া উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, প্রচারে থাকতেই এমনটা করছেন। নীরব অবস্থান নিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এই জমির বিবাদের ঘটনা দীর্ঘদিনের। বিশ্বভারতীর দাবি, অমর্ত্য সেনের লিজ নেওয়া জমির পরিমাণ ১.৩৮ একর নয়, ১.২৫ একর। ১৩ শতক জমি তিনি জবরদখল করে রেখেছেন। লাগাতার নোবেলজয়ীকে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে অতিরিক্ত জমি হস্তান্তরের দাবি করে যাচ্ছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কেন তাকে উচ্ছেদ করা হবে না, তা জানতে বিশ্বভারতী শোকজও করেছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদকে। জমি সংলগ্ন এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৪৫ ধারা চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন অমর্ত্যবাবুর আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী। কদিন আগেই বিশ্বভারতীর কর্মসচিব অশোক মাহাতকে চিঠির মাধ্যমে অমর্ত্য সেন জানান, ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে লিজ দেওয়া জমির ক্ষেত্রে কোনও দাবি থাকতে পারে না। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেছেন ম্যাজিস্ট্রেটও। এসবের পরেও বিশ্বভারতী নোবেলজয়ীকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্তে অনড়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমি খালি না করলে বলপ্রয়োগের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে নোটিশে।
প্রসঙ্গত, শান্তিনিকেতনের ক্যাম্পাসের বাইরে গোয়ালপাড়া, সর্বানন্দপুর, আদিত্যপুর, তালতোড় প্রভৃতি এলাকায় বিশ্বভারতীর বিঘার পর বিঘা জমি পড়ে রয়েছে। সেই জমিগুলি উদ্ধারে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনও তৎপরতা নেই। শ্রীনিকেতনের রথীন্দ্রপল্লির সুপ্তি রায়, পূর্বপল্লির তৃপ্তি বসু, কল্যাণ দাস প্রমুখ নিজেদের বাড়ি নিঃশর্তে বিশ্বভারতীকে দান করলেও, সেগুলি দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে। অভিযোগ উঠছে, পূর্বপল্লিতে তিন বিঘা প্লটের উপর বাড়িগুলির মালিকানা বেহাত হয়ে গেলেও, জমি উদ্ধারে তৎপর হতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে। ভুবনডাঙা বাঁধ, পূর্বপল্লি, শ্রীপল্লি, দক্ষিণপল্লির অধিকাংশ দখল হয়ে যাওয়া জমি আজও উদ্ধার করা যায়নি বলেই জানা গিয়েছে। এখানেই আশ্রমিকরা প্রশ্ন তুলছেন, কেন অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন বর্তমান উপাচার্য? এ ঘটনার নিন্দায় সরব হয়ে তাঁরা বলছেন, বিশ্বভারতীর সুনাম শেষ করতে চাইছেন উপাচার্য।