আজ থেকে শুরু হচ্ছে মজিলপুরের ধন্বন্ত্বরি কালীবাড়ির বেশের মেলা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার শ্রেষ্ঠ মেলা হল বেশের মেলা। আজ অর্থাৎ ২১ এপ্রিল শুরু হচ্ছে এই মেলা, যা আগামী পনেরো দিন ধরে চলে ৫ মে সমাপ্ত হবে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এই মেলা মানুষের মিলন ক্ষেত্রের রূপ ধারণ করে। জয়নগর মজিলপুরে ধন্বন্তরি কালীবাড়িতে বহু যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ধন্বন্ত্বরি মায়ের মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় জয়নগর মজিলপুর স্টেশনের ১নং প্ল্যাটফর্মে নেমে
পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথেই পড়ে এই মন্দির।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে আদি গঙ্গার মজিলপুর গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হত। সেই সময় ভৈরবানন্দ নামে এক তান্ত্রিক সাধক গঙ্গার এক চরার ওপর বসে সাধনা করতেন। বর্তমানে সেখানেই তৈরি হয়েছে মজিলপুরের ধন্বন্তরী কালী মন্দির। একদিন ওই তান্ত্রিক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান, দেবী নাকি বলেন তিনি পাশের পদ্মা পুকুরে রয়েছেন, তাঁকে উদ্ধার করে পুজো করার কথাও বলেন দেবী। জানান, দেবীর আরাধনা করলে মঙ্গল হবে। পুকুরে সন্ধান করে, ওই তান্ত্রিক কালো পাথরের কালী মূর্তি পান এবং একটি খড়ের চালার কুটিরে দেবীর মতো ওই মূর্তি পুজো করতে থাকেন।
ডায়মন্ডহারবারের ন্যাতরা গ্রামের রাজেন্দ্র চক্রবর্তীকে তিনি মজিলপুরে নিয়ে এসে, কালী মূর্তি পুজোর দায়িত্ব দিয়ে তিনি সাধনার উদ্দেশ্যে অন্যত্র চলে যান। রাজেন্দ্র চক্রবর্তীর সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে মা কালী তাঁকে একটি বাতের ওষুধ দেন, যা পানের মধ্যে দিয়ে খেলে বাত সেরে যায়। ধন্বন্ত্বরির মতো ওই ওষুধ কাজ দিতে শুরু করে। সেই থেকে কালী বিগ্রহটির নাম হয় ধন্বন্ত্বরি কালী, মন্দিরটিও ওই নামেই পরিচিত হয়। নিত্য পুজো ছাড়াও প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে এখানে বিশেষ পুজো হয়। শত শত ভক্ত মায়ের পুকুরে স্নান করে রোগমুক্তির জন্য ওষুধ খায় ও পুজো দেয়। প্রায় দেড় শতাব্দী আগে পাকা মন্দির গড়ে ওঠে। প্রায় শতাধিক বছর ধরে, ওই আদি পাথরের মূর্তির অনুকরণে একটি কাঠের মূর্তি নির্মাণ করে পুজো করা হচ্ছে। প্রতি বৈশাখ মাসের শুক্লা প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত ওই কাষ্ঠ মূর্তিতে ১৬টি বিভিন্ন মাতৃদেবীর মূর্তির রূপদান করা হয়। এই রূপদানকেই স্থানীয়ভাবে বেশ বলা হয় আর এই উপলক্ষ্যে যে বিরাট মেলা হয় তাকে বেশের মেলা বলা হয়। ষোলোটি বিভিন্ন বেশে কালীকে সজ্জিত করা হবে। যেমন প্রথম দিন কুমারী, তারপরদিন মাতৃসাধনা, গণেশজননী, ভূবনেশ্বরী, বিপত্তারিণী ইত্যাদি। সব শেষের অর্থাৎ ষোড়শ রূপটি তিনদিন থাকে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এই বেশ ও মেলা দেখতে ভিড় জমায়। মেলার পর ভাঙা মেলাও বেশ কিছুদিন চলে।