দেশ বিভাগে ফিরে যান

অমিত শাহর সফরের পরও হিংসা থামছে না মণিপুরে, নতুন করে ঘরছাড়া বহু মানুষ

June 6, 2023 | 2 min read

নতুন করে ঘরছাড়া বহু মানুষ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর শান্তি বজায় রাখার আহ্বান সত্ত্বেও মণিপুরে অশান্তির আগুন নিভছে না। শুক্রবার রাত ও শনিবার ভোরে ইম্ফল পশ্চিম জেলার ফায়েং এবং কাংচুপ চিংখং নামে দুটি গ্রামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ককচিং জেলার সুগনুতে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে। সেখানে কুকি জনগোষ্ঠীর জঙ্গিরা স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়কের বাড়ি-সহ প্রায় ২০০ বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। সেখানে নতুন করে ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। শুক্রবার রাত থেকে সুগনুতে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তাংজেং, নাপেট, পোম্বিখক-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে আসা সশস্ত্র কুকি জঙ্গিরা হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। সুগনুর কংগ্রেস বিধায়ক কাংগুজাম রণজিতের বাড়িও আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে ইম্ফল পূর্ব জেলার আন্দ্রো থানার কাছে ইয়াইরিপোক এনগারিয়ানে উত্তেজিত জনতা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ডন বসকো প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয়।


ক্যাথলিক মিশন দ্বারা পরিচালিত এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ফাদার জোসেফের দাবি, সম্পত্তিটি নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য ব্যবহার করা হবে এমন গুজব ছড়ানো হয়। পরে প্রায় তিন হাজার লোক প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা চালায়।

মণিপুরের প্রায় নব্বই শতাংশ পাহাড়ি জমিতেই কুকি, নাগা-সহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর বাস। বাকি অংশ অর্থাৎ ইম্ফল উপত্যকায় মূলত রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইরা থাকেন। অভিযোগ উঠেছে, মায়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের অরণ্যে নতুন জনবসতি গড়ে তুলছেন জনজাতি কুকিরা। এর ফলে আগামী দিনে তাঁদের জমি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা করছেন মেইতেইরা। শুধু তা-ই নয়, এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মায়ানমারের মাদক চক্রগুলিকে কাঁচামাল জোগানেরও অভিযোগ রয়েছে। ফলে, বিবিধ জনজাতির মধ্যে জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বদল এবং সম্পদ বণ্টনের জেরে অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত সপ্তাহেই চার দিন মণিপুরে ছিলেন। সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তিনি শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত থেকে শান্তি কমিটি গঠন বা অস্ত্র প্রত্যর্পণের জন্য তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি সব পক্ষকে অন্তত ১৫ দিনের জন্য শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন।


কিন্তু বৃহস্পতিবার অমিত শাহ দিল্লি ফিরে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের হিংসার ঘটনা ঘটে মণিপুরে। এই ঘটনা প্রমাণ করছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্র সরকারকে আরও অনেক চেষ্টা করতে হবে। শুধু তাই নয়, অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলে বলছেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রকে শুরুতেই সঠিক পদক্ষেপ করতে হত। কিন্তু তাদের আচরন দেখে মনে হয়েছিল, সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। যখন মণিপুরে আগুন জ্বলতে শুরু করেছিল তখন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কর্নাটকের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন! বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে মনে হয় না। আর যখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে গেছে তখন তাঁরা নড়েচড়ে বসেছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Amit shah, #Manipur, #Homeless, #Manipur burning, #Manipur violence

আরো দেখুন