পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

আজ‌ও দেবী বর্গভীমার নৈবেদ্যে দেওয়া হয় শোলমাছের টক, কেন জানেন?

August 9, 2023 | 2 min read

আজ‌ও দেবী বর্গভীমার নৈবেদ্যে দেওয়া হয় শোলমাছের টক

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম পীঠ তমলুক শহরের দেবী বর্গভীমা। পুরাণ থেকে জানা যায়, এখানে দেবীর বাম পায়ের গুম্ফ অর্থাৎ গোড়ালি পড়েছিল।

জানা গেছে, তমলুকের শক্তির একমাত্র দেবী ছিল এই বর্গভীমা। অর্থাৎ দেবী বর্গভীমা ছাড়া আর কোনও শক্তির দেবতার পুজো হত না। পরবর্তীকালে পুরোহিতদের বিধান অনুযায়ী, আগে দেবী বর্গভীমার পুজো দিয়ে তারপর অন্য পুজো শুরু করা হয়। দেবী বর্গভীমার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কম নয়। জানা গেছে, একসময় তমলুকে এসেছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। তিনি বিপ্লবীদের সঙ্গে বৈঠক করার আগে, দেবী বর্গভীমার কাছে আন্দোলনের সাফল্য কামনায় পুজো দিয়ে তারপর কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন।

অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার তমলুকের এই বর্গভীমা মন্দির প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে নানান অলৌকিক কাহিনি।

কথিত রয়েছে, তমলুকের ময়ূরবংশীয় রাজা তাম্রধ্বজের রাজত্বে প্রত্যেকদিন জ্যান্ত মাছের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এলাকার জেলেদের। সেই মতো, রাজপরিবারকে এক জেলে রমণী রোজ জ্যান্ত শোল মাছের যোগান দিয়ে আসছিলেন । কিন্তু হঠাৎ একদিন ওই জেলের স্ত্রী দেখলেন, তাঁর জিয়ানো সবকটি মাছ মরে গেছে। তখন তিনি কী করবেন বুঝে উঠতে না পেরে, মনের দুঃখে বনের মধ্যে বসে কাঁদতে শুরু করে দেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে এক মহিলা এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন ‘কি হয়েছে?’ তখন জেলের স্ত্রী জানান তাঁর সমস্যার কথা। সব কথা শুনে সেই মহিলা বলেন, সামনে কিছুটা এগোলে যে বন পড়বে, সেখানে একটি জলের কুণ্ড রাখা আছে। সেই জল যদি মাছের গায়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে মাছগুলি ফের জ্যান্ত হয়ে যাবে।

পাশাপাশি এই কথা জেলের স্ত্রী যাতে ঘুণাক্ষরে কাউকে না বলেন, সে কথাও জানিয়ে দেন সেই মহিলা। সেই নির্দেশ মেনে হাতেনাতে ফল পান জেলের স্ত্রী। এবার থেকে তিনি রোজ রাজাকে জ্যান্ত শোল মাছ দিয়ে আসতে লাগলেন। বেশ কিছুদিন পর রাজার মনে সন্দেহ হয়। রোজ কি করে জেলের স্ত্রী এইভাবে জ্যান্ত মাছের যোগান দিয়ে চলেছে। এমনকি অসময়েও একইভাবে জ্যান্ত মাছের যোগানের রহস্যটা কী, তা জানতে জেলের স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকেন রাজা। প্রথমে ধীবর রমণী কিছু বলতে না চাইলেও, তাঁকে ভয় দেখিয়ে জোর করে রাজা আসল সত্যিটা জেনে নেন। রাজা ঠিক করেন, তিনি নিজেই একবার হাতেনাতে পরীক্ষা করে দেখবেন।

সেই মতো ওই ধীবর রমণীকে নিয়ে রাজা জলের কুণ্ডের কাছে গেলে দেখতে পান, জলের কুণ্ড নেই, সেখানে পড়ে রয়েছে একটি পাথরের ওপর শিলাখণ্ড। সেই দিন রাজা স্বপ্নাদেশে দেবীকে দেখতে পান। তারপর রাজা সেখানেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যা আজকে দেবী বর্গভীমারুপে পরিচিত। সেই পাথরের ওপর শিলাখণ্ড, আজও দেবীমূর্তি হিসেবেই পূজিতা হন। আর সেই থেকেই আজও দেবী বর্গভীমার ভোগের অন্যতম পদ শোলমাছের টক।

এই তমলুক এলাকা বর্গীহামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি। তবে বর্গীরা এই মন্দির ধ্বংশ করতে এসে পিছপা হন। পরে তাঁরাও এখানে পুজো দেন। কালাপাহাড় মন্দির ধ্বংস করতে এসে দেবীর পদতলে আশ্রয় নিয়ে ক্ষমাভিক্ষা চান। এমনকি তমলুকের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রুপনারায়ণ নদ সমস্ত কিছুকে গ্রাস করলেও কোনওপ্রকার ক্ষতি হয়নি মন্দিরের।

কালিপুজোর দিন দেবী বর্গভীমার বিশেষ পূজার্চনার ব্যবস্থা করা হয়। ওই দিন মাকে রাজবেশ পরানো হয়। তন্ত্রমতে এখানে পুজো হয়। মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। কথিত আছে, মনস্কামনা পূরণের জন্য সেই পুকুরে ডুব দিয়ে যে যা হাতে পান তা মন্দিরের পাশে কেলিকদম্ব বা কাট কলকে গাছে সুতো দিয়ে বেঁধে যান। মনস্কামনা পুরণ হলে তাঁরা পুজো দিয়ে যান।

এই দেবীর ভোগে শোলমাছ ছাড়াও পাঁচ রকমের মাছ, পাঁচ রকম ভাজা, পাঁচরকমের তরকারি দেওয়া হয়। এছাড়া, ভাত, পোলাও, ফ্রায়েডরাইস, খিচুড়ি, নানান পদের মিষ্টি প্রভৃতি থাকে। তবে শুধুমাত্র কালীপুজো কিংবা দুর্গাপুজোয় নয়, দেবী বর্গভীমা সারা বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন। এখন‌ও বহু দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন মায়ের টানে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #shol macher tok, #borgobhima

আরো দেখুন