রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

দিলীপ ঘোষ অভিমানী নাকি কৌশলী? বিজেপি’র অন্দরে চলছে জোর চর্চা

November 23, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলার রাজনীতিতে তিনি ‘প্রকট’ হওয়ার পর থেকে ভাষাই তাঁর প্রধান হাতিয়ার। সেই হাতিয়ার নিয়ে বিতর্ক বিস্তর। কিন্তু দিলীপ ঘোষের অগাধ আস্থা তাঁর ‘বাক্শক্তি’তে। শাসককে নিশানা করতে গিয়ে এমন এমন শব্দ প্রয়োগ করেছেন, যা নজিরবিহীন। কখনও তিনি ‘বিদেশি গরুকে’ ‘মাসি’ বলেন, কমিশনকে ডাকেন ‘মেসো’ বলে। কখনও মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন, যে অস্বস্তিতে পড়ে দলই। তাতে দিলীপের অবশ্য ভ্রুক্ষেপ নেই। দিলীপ আছেন দিলীপেই।

এহেন দিলীপ ঘোষ যিনি বিজেপি’র রাজ্যসভাপতি হওয়ার পর দল সাফল্য পেয়েছে। যা আগে কোনও কালেই এই বঙ্গে ঘটেনি। হয়েছেন বিধায়ক, সাংসদ। কিন্তু সবই এখন অতীত। একুশের পর থেকে ছবিতে বদল আসতে শুরু করে। ক্ষমতা বাড়ে অন্য দল থেকে আসা নেতাদের। লাইমলাইটে উঠে আসে নতুন মুখ। ক্রমেই কোণঠাসা হতে থাকেন দিলীপ। দলেরই একাংশ মনে করেন, মুখের উপর দিলীপ ঘোষের কথা বলে দেওয়ায় বঙ্গ নেতাদের কাউকে কাউকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। এ নিয়ে নালিশও হয়েছে।

কোনও ‘অজানা’ কারণে বেশ কিছু সময় ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন দিলীপ। এবার কি তবে বিজেপিকে ‘বাই বাই’ বলে আবারও সঙ্ঘ প্রচারক হিসাবেই কাজ করবেন দিলীপ ঘোষ? এরকমই জল্পনা চলছিল। আর মঝেমধ্যেই তাঁকে দেখা যায় মাছ ধরতে, বাগান করতে, চাষাবাদ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরামর্শ দিতে। এই পর্যন্ত ঠিকই চলছিল। কিন্তু গোল বাধল শুক্রবার করা তাঁর একটি মন্তব্য নিয়ে। রাজ্য–রাজনীতিতে বঙ্গ–বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিল। এবার সরাসরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে বসলেন দিলীপ। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভাল নেতা রাহুল গান্ধীর থেকেও বলে মনে করছেন তিনি। কেন একথা বলছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন দিলীপ। দিলীপের কথায়, “রাহুল গান্ধীর চেয়ে অভিষেকের কথাবার্তা অনেক বুদ্ধিদীপ্ত মনে হয় আমার।”

এরপরই সংবাদমাধ্যমে জল্পনা শুরু হয়েছে তাহলে দিলীপ কি এবার বিজেপি’র সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ‘অন্যত্র’ যেতে চলেছেন? উল্লেখ্য কয়েকদিন আগেই বঙ্গ বিজেপি’র আরেক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবং প্রবীণ নেতা তথাগত রায় ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি সরাসরি বার্তা দিয়েছেন, রাজ্য সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে সুকান্ত মজুমদার বা দিলীপ ঘোষকে নয়, যোগ্যতম শুভেন্দু অধিকারীই। যিনি একদা বলেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের পচা জিনিস বিজেপি কাজে লাগিয়েছে। আর তার জেরেই এমন ফলাফল হয়েছে। সেই পচা জিনিসের তালিকায় তখন শুভেন্দু অধিকারীও ছিলেন। ৬টি উপনির্বাচন হওয়া কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশ হবে। ঠিক তার আগে শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষ নিয়ে তথাগত রায়ের ব্যাট করা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে এগিয়ে রাখা নিয়ে বেশ কয়েকটি যুক্তি দিয়েছিলেন তথাগত রায়। ফেসবুক পোস্টা তা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘প্রথম, শুভেন্দু স্বয়ং মমতাকে হারিয়েছেন। ফলে মমতা কম্পার্টমেন্টাল পরীক্ষা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হতে বাধ্য হয়েছেন। দ্বিতীয়, শুভেন্দুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সুকান্ত এবং দিলীপের চাইতে অনেক দীর্ঘ। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম আন্দোলন দিয়ে তাঁর হাতেখড়ি। তৃতীয়, শুভেন্দু যেরকম স্পষ্ট ভাষায় মমতাকে চোর বলেন, হিন্দু একীকরণের কথা বলেন, এবং রাজ্য চষে বেড়ান, সেরকম অন্য কেউই পারেন না বা করেন না। সংস্কারের উপর একজন খুব জোর দিয়েছেন। সংস্কার ঠিকই আছে, কিন্তু ব্যবহারিক রাজনীতিতে এর স্থান সীমিত। সুতরাং, দোষগুণ বিচার করে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিকে নেতৃত্ব দেবার জন্য যোগ্যতর আর কেউ নেই।’

ফেসবুক পোস্টের শেষে তথাগত রায় আর একটি লাইন লিখেছিলেন। তাঁর লেখা, ‘শেষে একটা কথা। যদি কুণাল বা তৃণমূলের অন্য কোন মাল কোন একজন বিজেপি নেতার হয়ে ওকালতি করে, তবে বুঝতে হবে, ডালমে কুছ কালা হ্যায়।’

আর শুক্রবার দিলীপের অভিষেককে নিয়ে করা মন্তব্য এবং তথাগত রায়ের ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’ মন্তব্য এখন মিলেয়ে দেখতে চাইছে অনেকেই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#abhishek banerjee, #West Bengal, #bjp

আরো দেখুন