হোলটাইমার, গণ সংগঠনের উপর আর আস্থা রাখতে পারছে না CPI(M)? ‘শূন্যের কলঙ্ক’ দূর করতে এখন চাই পেশাদার ভোটকুশলী

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: একসময় সিপিএম-এর সংগঠন নিয়ে চলতি একটা কথা ছিল, কোন বাড়িতে হাঁড়িতে কতটা চাল দেওয়া হচ্ছে তার খবর বা তথ্যও থাকত কমরেডদের কাছে! এহেন সংগঠন বা হোলটাইমারদের উপর আর আস্থা রাখতে পারছে না সিপিএম। তাই এখন হাঁটা শুরু করল পেশাদারিত্বের পথে। তাদের চাই মাইনে করা ‘পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট’। সাদা বাংলায়, ‘রাজনৈতিক বিশ্লেষক’ বা ‘ভোটকুশলী’ বললেও মন্দ হয় না। আর একটু এগিয়ে বললে, বাংলায় বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে একজন প্রশান্ত কিশোর খুঁজছে সিপিএম।
ছটি বুধানসভা উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট যে খুব একটা ভাল কোনওব ফল করতে পারবে এটা কট্টর বামপন্থীরাও বোধহয় আশা করেন নি। গান, বাজনা, সিনেমা, কালচার—কোনও কিছুতেই হাল ফেরাতে পারছে না। তাই এখন সিপিএমের আসল লক্ষ্য, ২০২৬’এর বিধানসভা ভোটে ‘শূন্যের কলঙ্ক’ থেকে মুক্তি।
শুক্রবার সকালে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সোশ্যাল মাধ্যমে পোস্ট করেন, ‘উই আর হায়ারিং’। এই বিজ্ঞাপন বাম দলে নজিরবিহীন। সিপিএম কি না শেষ পর্যন্ত সদস্যপদ দেওয়ার দুর্গম পথ ছেড়ে, বায়োডেটা ঘেঁটে ভোটকুশলী খুঁজবে? অনেকে বলছেন, সময়-পরিস্থিতি সবকিছুই বদলে দেয়। নতুন এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সীতারাম ইয়েচুরি ক্যাডার ডেভেলপমেন্ট স্কিম’।
চাই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পেশাদার। আবেদনকারীদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া হচ্ছে ‘এক্সপেক্টেড স্যালারি’ও। পদ পাঁচটি—পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট, পলিটিক্যাল ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটার, গ্রাফিক ডিজাইনার ও ডিজিটাল মার্কেটিং এগজিকিউটিভ। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘সমাজ মাধ্যম মানে সমাজের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন। যার মাধ্যম প্রযুক্তি। প্রযুক্তি যারা জানে, তাদের কাছে শেখার আছে। এর মধ্যে সৃজনশীলতা আছে। আমাদের তরুণ, সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের লোকেদের প্রশিক্ষণ দরকার। একসঙ্গে কাজ করলে সিপিএমের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়বে।’
পার্টি সদস্য না হলে এই দলে যোগ দেওয়া যাবে? সেলিম বলেন, ‘পার্টির বাইরে অনেকে থাকে, যাঁরা দরদী, সমর্থক। সকলকে নিয়ে মানবসম্পদ তৈরি হয়।’ রাজ্য সম্পাদক সোশ্যাল মাধ্যমে নিয়োগের বার্তা দেওয়ার পরই নেতৃত্ব থেকে পার্টি কর্মী-সমর্থকরা একেবারে প্রচারে ভরিয়ে গিয়েছেন। আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, বিভিন্ন গণসংগঠন থেকে লোক নিয়ে ইতিমধ্যেই টিম তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁদেরকেই প্রশিক্ষণ দেবেন পেশাদাররা। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এরিয়া, জেলা, রাজ্য কমিটিই শেষ কথা বলবে। এই পেশাদাররা বিভিন্ন বিষয়ে ‘ইনপুট’ দেবেন। এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘অনেকে ৪০ বছর রাজনীতি করার পর বুঝতে পারছেন, এখন পরিস্থিতি বদলেছে।’ পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে প্রবীণ নেতা কিংবা তরুণ টেক স্যাভি হোলটাইমাররা রেগে যাবেন না তো? এক নেতার কথায়, ‘সকলে যাতে মেনে চলেন, তাই তো একেবারে উচ্চপর্যায় থেকে বিষয়টা করা হয়েছে।’ তাহলে কি তৃণমূল-বিজেপির মতো ‘থার্ড পার্টি’ নির্ভরশীলতায় চলে গেল সিপিএম? নেতৃত্ব বলছে, নিজেদের মতো টিম তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
শুক্রবারই সীতারাম ইয়েচুরির ‘মতাদর্শের প্রশ্নে’ বইপ্রকাশের জন্য রোটারি সদন ভাড়া করেছিল সিপিএম। আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, এর আগে সিপিএমের অনুষ্ঠান কখনও এইসব জায়গায় হয়েছে? হয়নি তো অনেক কিছুই। এবার হবে।