মৃত্যুর সংখ্যা আসলে কত? এই প্রশ্ন তীব্র হয়ে ঘুরছে কুম্ভপ্রাঙ্গণে

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: হামিরপুরের দেহাদেরা গ্রাম থেকে এসে পদপিষ্ট হওয়ার সেই কালান্তক ভিড়ের ধাক্কায় হারিয়ে গিয়েছে ফুলি নিষাদ। তার ছেলে রাজেশ উন্মাদের মতো মাকে খুঁজে চলেছে। দেওরিয়া থেকে আসা ১৫ জনের দলে ছিল মায়া সিং। স্ত্রীর সন্ধানে একের পর এক পুলিশ ক্যাম্পে ঘুরছে জনার্দন সিং। ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়ার রেণুলতা নন্দীকে শেষবার দেখা গিয়েছে মাটিতে পড়ে যেতে। কিন্তু অমরকুমার নন্দী মাকে বাঁচাতে যেতে পারেনি। ভিড়ের স্রোত তাকে সরিয়ে নিয়ে ফেলেছে অনেক দূরে। সেই শেষ দেখা। মৃত্যুর সংখ্যা আসলে কত? এই প্রশ্ন যেখানে তীব্র হয়ে ঘুরছে কুম্ভপ্রাঙ্গণে, সেখানে নিখোঁজের বিপুল সংখ্যা আশঙ্কার আগুনে ঘি ঢালছে। নিখোঁজরা কোথায়? আত্মীস্বজনের আকুল প্রশ্ন।
ঠিক এই আবহে গোপন মোবাইল ক্যামেরায় তোলা একটি ভিডিও প্রচার করেছে লখনউয়ের এক সংবাদ চ্যানেল। ওই স্টিং অপারেশনে দাবি করা হয়েছে, একটি মৃতদেহের উপর লেখা আছে লাশ নম্বর ৫৮! নিখোঁজের পরিবারের লোক সেজে মর্গে ঢোকা ‘রিপোর্টার’ গোপন ক্যামেরায় ৫৩, ৫৪, ৫৫ ‘ট্যাগ’ লাগানো দেহও দেখিয়েছেন। কিন্তু সরকার যে বলছে, মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের! সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো হইচই ফেলে দেওয়া এই ভিডিওর অভিযোগ (‘দৃষ্টিভঙ্গি’) এই ভিডিওর সত্যাসত্য যাচাই করেনি) সত্যি হলে সরকার যে সংখ্যা প্রকাশ করেছে, সেটা কী? সরকারি হাসপাতালেই দেখা যাচ্ছে, তার দ্বিগুণ সংখ্যক দেহ ডাঁই হয়ে রয়েছে। কুম্ভের সিএমও অরুণকুমার তিওয়ারির বক্তব্য বেশ ধোঁয়াশাজনক। তিনি বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ সরকার যখন ৩০ জনের কথা বলছে, তখন আমিও তাই বলব। আমি রাজ্যের সঙ্গে। অন্য কে কী বলছে, আমি জানি না।’
মৃত্যুর সংখ্যা যে গোপন করা হচ্ছে, সেটা আর নিছক অভিযোগ ও সন্দেহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সংসদেই বিবৃতি দাবি করা হয়েছে। বাজেট অধিবেশন শুরু আজ। তার প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে সরকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে একঝাঁক বিরোধী দল মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা পার্লামেন্টে জানানোর দাবি তুলেছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মনোজ কুমার ঝা, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদবরা এদিন সরকারপক্ষকে বলেন, কুম্ভমেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা খবর পাচ্ছি, আদতে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। সংসদে বিবৃতি দিক সরকার। মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র সদস্যরা এই দাবিকে সমর্থন করায় বিস্তর চাপে সরকারপক্ষ। যোগী সরকার অবশ্য এরপরও মচকাচ্ছে না। কুম্ভমেলায় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যর্থতাও আড়াল করতে তৎপর তারা। উপ মুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক বলেছেন, ‘বিচারবিভাগীয় কমিশনকে বলা হয়েছে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে। বিশেষ করে আমরা জানতে চাই, এর পিছনে কোনও চক্রান্ত ছিল কি না। ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা ঘটানো হয়নি তো?’ চক্রান্ত তত্ত্বের কারণ খতিয়ে দেখতে আজ শুক্রবারই তিন সদস্যের বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন যাচ্ছে ঘটনাস্থলে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হর্ষ কুমার এর নেতৃত্বে।