কারাবাসে সরস্বতী পুজো করেছিলেন সুভাষ বসু
সৌভিক রাজ

১৯২৩ সালে সুভাষচন্দ্রকে বন্দি করে ব্রিটিশ। পরের বছর তাঁকে মুর্শিদাবাদ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বহরমপুর জেলের সাত নম্বর ঘর হয় তাঁর ঠিকানা। ঐ সময় জেলের মধ্যে সরস্বতী পুজো করার জন্য সুভাষ জেদ ধরেন। প্রথমটায় পুজোর বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষ রাজি ছিল না। কিন্তু নেতাজির জেদ! ব্রিটিশ কী আর পারে! অবশেষে মেনে নেয় জেল কর্তৃপক্ষ। পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। শোনা যায়, এই পুজোকে অনেকেই সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছিল। পুজো দেখতে যাওয়ার অছিলায় অনেকেই জেলের ভিতরে সুভাষের সঙ্গে দেখা করেন। যদিও আইনজীবী তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশের প্রাক্তন সাংসদ শশাঙ্কশেখর সান্যালের স্ত্রী উষা দেবীর স্মৃতি কথায় অন্য কথা উঠে এসেছে।
উষাদেবীর লেখা অনুসারে ঐ সময় জেলে সরস্বতী হয়নি, হয়েছিল দুর্গাপুজো। সেসময়ে পুজো দেখার জন্য উষাও জেদ ধরেন। খ্যাতনামা চিকিৎসক সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অর্থাৎ উষা দেবীর বাবা তাকে পুজো দেখাতে জেলখানায় নিয়ে যান। বোস দ্যি ফরগটেইন হিরোতে শ্যাম বেনেগেল দুর্গা পুজোই দেখিয়ে ছিলেন। কিন্তু সত্যিটা কী? সুভাষচন্দ্র মুর্শিদাবাদের জেলে আসনে ডিসেম্বর মাসে এবং পরের বছর জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ঐ জেলেই ছিলেন। বাংলায় দুর্গাপুজো হয় শরৎকালে, কিন্তু সুভাষচন্দ্র মুর্শিদাবাদের জেলে আসনে শীতে সেই সময় দুর্গা পুজো হওয়ার কথা না। বহরমপুর জেল থেকে দাদা শরৎচন্দ্র বসুকে লেখা সুভাষের চিঠি সে কথা বলে। লোকসংস্কৃতি গবেষক পুলকেন্দু সিংহ ‘মুর্শিদাবাদে সুভাষচন্দ্র’ গ্রন্থে লেখেন, ‘‘বহরমপুর জেল থেকে সুভাষচন্দ্র ৮।১২।১৯২৪ তারিখে দাদা শরৎচন্দ্র বসুকে লিখেছেন, ‘গত বুধবার আমি এখানে এসে পৌঁছেছি।’ অর্থাৎ তিনি বহরমপুরে এসেছিলেন ৩।১২।১৯২৪ তারিখে। শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মুর্শিদাবাদের জেলে থেকে তিনি ২৫।১।১৯২৫ তারিখে ফিরে যান। তখন কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় নয়। অতএব ঐ সময় সরস্বতী পুজোই হয়েছিল।
আজ ঐ কারাগার মানসিক হাসপাতালে পরিনত হয়েছে। আজও সেখানে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করা হয়।