গত ৫ বছরে শ্রমিকের জন্য কেন্দ্রের গৃহীত পদক্ষেপ কী? অভিষেকের লিখিত প্রশ্নের কী উত্তর দিল মন্ত্রক? দেখে নিন

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গত ৫ বছরে শ্রমিকের জন্য কী অবদান মোদী সরকারের? সংসদে লিখিতভাবে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের কাছে তাঁর প্রশ্ন ছিল, বিপজ্জনক শিল্প ও নির্মাণ ক্ষেত্র সহ গত পাঁচ বছরে সারা দেশে মোট কতজন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে তার কোনও তথ্য কেন্দ্রের কাছে আছে কিনা? যদি তাই হয় তবে তার বিবরণ, বছর, রাজ্য ও শিল্প ভিত্তিক কতজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে? উক্ত সময়কালে মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে প্রদত্ত মোট ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এবং রাজ্যভিত্তিক এখনও বিচারাধীন ক্ষতিপূরণের মামলার সংখ্যার বিবরণ কী? এছাড়াও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে অভিষেক জানতে চেয়েছেন যে, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলিকে সময়মতো ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ কী কী ছিল? অভিষেকের এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রবল অস্বস্তিতেই পড়তে হয়েছে কেন্দ্রকে।
অভিষেকের প্রশ্নের উত্তর ঘোরানোর জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক সাফাই দিয়ে শুধুমাত্র ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট, কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ আইনের কথা উল্লেখ করেই দায় সেরেছে। অর্থাৎ কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি কেন্দ্র। উত্তর দিতে গিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী সুশ্রী শোভা করন্দলাজেকে। তিনি অভিষেকের লিখিত প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, সরকার ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট, ১৯৪৮ প্রণয়ন করেছে, যা এই আইনের অধীনে নিবন্ধিত কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কল্যাণের ব্যবস্থা করেছে।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী আরও জানান যে, কারখানা আইন, ১৯৪৮ এবং তার অধীনে প্রণীত বিধিগুলি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে চিফ ইন্সপেক্টর অফ ফ্যাক্টরি (সিআইএফ) / ডিরেক্টরেট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (ডিআইএসএইচ) এর মাধ্যমে প্রয়োগ করে। কারখানা আইন, ১৯৪৮ এবং তার অধীন প্রণীত বিধি লঙ্ঘনের জন্য সিআইএফ/ডিআইএসএইচ-কে কারখানার দখলদার ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট, ১৯৪৮ এর অধীনে মারাত্মক আহতের বিবরণ যথাক্রমে ১১৫৪, ১১২৭, ১০৫০, ৯৮৮ এবং ১০৫৩ ছিল।
অত্যন্ত দায়সারাভাবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক এরজানিয়েছে যে, নির্মাণ খাতের ক্ষেত্রে ইমারত ও অন্যান্য নির্মাণ শ্রমিক (কর্মসংস্থান নিয়ন্ত্রণ ও চাকরির শর্তাবলী) আইনে, ১৯৯৬ এবং তদধীন প্রণীত বিধিমালায় নির্মাণ শ্রমিকদের কল্যাণ, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ আইন, ১৯২৩ অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, কর্মচারী এবং তাদের নির্ভরশীলদের চাকরি থেকে এবং চলাকালীন আহত ও দুর্ঘটনাগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এবং তাদের ক্ষতি বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করে। আইনটি রাজ্য সরকারগুলি দ্বারা বাস্তবায়িত হয়। স্পষ্ট জবাব কেন্দ্র না দিয়ে শুধুমাত্র উত্তর ঘোরানোর চেষ্টা করেছে মাত্র। অর্থাৎ মন্ত্রীর জবাব থেকে এটা স্পষ্ট যে, সংসদে অভিষেকের প্রশ্নবানে কার্যত বেকায়দায় পড়তে হয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রককে।