বইমেলাতেও এবার থিমের ছোঁয়া

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শুধু পুজো নয়, এবার বাঙালির আর এক বড় পার্বণ বইমেলাতেও থিমের আসর। এ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস মঙ্গলবারও মুখর ছিল বইমেলা। আকাশ পরিষ্কার। দিব্যি রোদ। বই কিনে, মেলা ঘুরে, খেয়েদেয়ে জমিয়ে আনন্দ করলেন অনেকে। আর ভিড় জমালেন থিম দেখতে।
৯ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলেই লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন। পিছনে খাবারদাবারের দেদার ব্যবস্থা। সেসবকে পাশ রেখে রিং রোড ধরে এগলেই পরপর কয়েকটি ‘ছোট্ট খুপড়ি’। সেই সারির অন্যতম ৬১৬ নম্বর স্টল। মাকড়সার জালে ছেয়ে থাকা ছাদ। বাদুড় ঝুলছে। দেওয়ালের রং টকটকে লাল। তার মাঝে উঁকি দিচ্ছে ভয়ানক, বিস্ফারিত, রক্তলাল, গিলতে আসা চোখগুলি। চোখ-দাঁত-মুখ বের করে কারা যেন এগিয়ে আসছে। ঢুকতে গিয়ে থমকে যাবেন যখন, তখনই চোখে পড়বে ডানদিকের দেওয়ালে বড় বড় করে লেখা, ‘কখনও অশরীরী দেখেছেন?’ আর পাশের দেওয়ালে, বইয়ের তাকের উপরে সেই চিরকালের সতর্কবাণী—‘এক ডাকে সাড়া দেবেন না!’ এই প্রথমবার বইমেলায় হাজির টাইমলাইন পাবলিকেশন। তাদেরই থিম অশরীরী। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, ‘আমাদের ভূতের গল্প গোগ্রাসে গেলেন পাঠকরা। তাই এই ভয়ভাবনা।’ স্টলের ট্যাগলাইন, ‘সম্পর্ক, রহস্য, তন্ত্রের ভয়, টাইমলাইনজুড়ে থাক ৬১৬।’
বইমেলায় থিমের স্টল এই একটি শুধু নয়। এর আগে চারবছর সেরা স্টলের পুরস্কার পেয়েছিল ‘বাণীশিল্প’। ২ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেই স্টলটির আলঙ্করণ এবারও মুগ্ধ করবে। প্রচ্ছদের জন্য আগে যে ধাতুর ব্লক ব্যবহার করা হতো, তা দিয়েই সাজানো হয়েছে বাইরে। বইমেলায় ঢুকেই দেদার ছবি তুলছেন মানুষ। তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলে সামনেই ইয়াব্বড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টল। তার গায়েই নাসার একটি মহাকাশযান এবং দু’টি প্রমাণ সাইজের স্পেসস্যুট রাখা। অর্থাৎ, রীতিমতো সেলফি জোন। ‘কল্পবিশ্ব’-এর স্টলেও ঝুলছে মিনি স্পেসস্যুট। গয়না প্রস্তুতকারক সংস্থা পিসি চন্দ্র জুয়েলার্সের স্টল এবার বনেদি বাড়ি। তার গায়ে আঁকা হাতে টানা রিকশ থেকে দুর্গাপুজো, হলুদ ট্যাক্সি—বাংলার নিজস্ব যা কিছু। আইএএস শান্তনু বসুর বই ‘বাংলা ও বাঙালি’ প্রকাশিত হয়েছে পিসি চন্দ্র থেকে। তারই প্রভাব গোটা স্টল এখন সেলফি তোলার হটস্পট। আর ‘জাগো বাংলা’র গ্রামের বাড়ির আদলে বিশাল স্টল তো রয়েছেই। সেখান থেকে ভেসে আসছে বাউল গান। এক কর্মী বললেন, ‘এখন তো থিমের যুগ। সবাই ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছেন। জোরদার প্রচার… কী বলেন!’
এ বছর ‘উদ্বোধন’-এর স্টল সেজে উঠেছে জয়রামবাটিতে সারদা মায়ের পুরাতন বাটীর আদলে। স্টলের দায়িত্বে থাকা শ্রীকান্ত চৈতন্য জানালেন, মা এবং স্বামীজিকে কেন্দ্র করে উদ্বোধনের কার্যকলাপ। তাই তাঁদের কথা মাথায় রেখেই স্টল সাজানো হয়েছে। এই প্রথমবার মেলায় স্টল দিয়েছে দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকা ‘মাতৃশক্তি’। তাদের ৪৫৪ নম্বর স্টলও মা ভবতারিণীর মন্দিরের আদলেই।