এই মুহূর্তে বাংলার শিক্ষামহলের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে একটি প্রাচীন পুঁথি, কী লেখা রয়েছে তাতে?

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: ২০০৭ সালে ঝাড়গ্রামের দহিজুড়ির এক বাসিন্দার বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছিল প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন পুঁথি। এই পুঁথিটিতে স্থানীয় ভাষায় মহাভারত লেখা আছে। ব্যসদেবের মহাভারত অনুসরণ করেই গায়নী ভঙ্গিতে লেখা হয়েছে পুঁথিটি। মূল মহাভারতের মতোই ১৮টি অধ্যায়ে বিভক্ত এটি।
জামবনী সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ে রক্ষিত এই পুঁথি বাংলার শিক্ষামহলের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। সেবাভারতী কলেজের একদল গবেষক পুঁথিটি নিয়ে গবেষণায় রত। তাঁদের বক্তব্য, এই পুঁথিটি বদলে দিতে পারে ইতিহাস। সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ সাহু বলেন, কলেজের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ফোক মিউজিয়ামে পুঁথিটি সংরক্ষিত আছে। ন্যাকের সদস্যরা প্রথমবার কলেজ পরিদর্শন করতে এসে পুঁথিটি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ন্যাক টিমের পরামর্শ মতো পুঁথিটি সংরক্ষণ করে রাখা হবে। গবেষণার কাজ চলছে। আমরা আশাবাদী এই পুঁথি সামনের দিনে নতুন তথ্যের সন্ধান দেবে।
কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক সরোজকুমার পানি, যিনি গবেষণা করছেন, তিনি বলেন, এই পুঁথিটি রত্নভাণ্ডার। বাঁকুড়ায় ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’, মেদিনীপুরে ‘চণ্ডীমঙ্গল’ লেখা হয়েছিল। তৎকালে ঝাড়গ্রাম এই এলাকাগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ছিল। উদ্ধার হওয়া এই পুঁথি ঝাড়গ্রামের সামাজিক ও ধর্মীয় বিবর্তনের সন্ধান দিতে পারে। ন্যাকের সদস্যরা কয়েকদিন আগেই এই কলেজে পরিদর্শন করে গিয়েছেন। দুষ্প্রাপ্য এই পুঁথি দেখে তাঁরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষকে ভালো করে পুঁথিটি সংরক্ষণ কথা বলেন। ঝাড়গ্রামের অতীত ইতিহাস এখনও লেখা হয়নি। দু’ হাজার বছর আগে নদী তীরবর্তী জনপদ এলাকায় একাধিক বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। জৈন ব্যবসায়ীরা এখানে বহু জৈন মন্দির তৈরি করেছিলেন। চৈতন্যদেবের আগমনে গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের ধর্মীয় আন্দোলনের প্রভাবও এই এলাকায় পড়েছিল। যাকে কেন্দ্র করে সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে বদল এসেছিল। সে ইতিহাসের আজও পুনরুদ্ধার হয়নি। জেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক পুঁথির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মহাভারতের পুঁথিটি সেগুলির মধ্যে অন্যতম।