সত্যজিৎ রায় থেকে অমিতাভ বচ্চন, কলকাতা ও ভারতীয় চলচ্চিত্রের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি রক্ষা করছে বেঙ্গল ফিল্ম আর্কাইভ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সম্প্রতি জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতা উইন ওয়েন্ডারস কলকাতা সফরে এসে, বিশপ লেফ্রয় রোডে সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। অনেকেই জানেন না, বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িটি ছাড়াও সত্যজিৎ; তাঁর জীবনে শহরে একাধিকা থেকেছে একাধিক বাড়িতে থেকেছেন। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের সঙ্গে সেই বাড়িগুলোও জড়িয়ে গিয়েছে। কয়েকটি বাড়িতে সত্যজিৎ ছাড়াও অন্য কৃতীরা নানান সময়ে থেকেছেন। বাড়িগুলি এখনও জীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। শহরের নানান এলাকার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তিরা। তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ডিজিটাল আর্কাইভ। করোনা অতিমারি চলাকালীন যখন শহরের রাস্তাগুলি নির্জন ছিল, সেই সময় অনুসন্ধান চালানো হয়। সিনেমাপ্রেমী ও আগ্রহীদের সুবিধার জন্য একটি ডিরেক্টরি তৈরি করা হয়েছিল। অমিতাভ বচ্চন হোক বা উৎপল দত্ত বা বাপ্পি লাহিড়ী, এখন সহজেই জানা যাবে আনন্দনগরীর কোথায় তাঁরা থাকতেন।

যেটুকু যা স্মৃতিচিহ্ন টিকে রয়েছে, তা-ই সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিংশ শতকের বাংলা চলচ্চিত্রের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা থাকলেও ইতিহাস নথিভুক্ত করার প্রচেষ্টা কার্যত ছিল না। তখনই আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল অতিমারি। শিল্পী ও দর্শকদের জন্য একটি দ্বিভাষিক ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরি করা হয়। বাংলা চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র সম্পর্কিত তথ্যের জন্য তৈরি হয় বেঙ্গল ফিল্ম আর্কাইভ।

অনেকেই জানেন না, বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়ির আগে অন্তত চারটি বাড়িতে থেকেছেন সত্যজিৎ। তিনি গড়পার রোডে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে তাঁর পরিবার বকুল বাগান রোডে উঠে আসে। পথের পাঁচালী যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন তিনি লেক এভিনিউতে থাকতেন। লেক টেম্পল রোডের ফ্ল্যাট যেখানে তিনি পরে কিছুদিন বসবাস করেছিলেন, সেখানে তিনি উঠে যাওয়ার পরই অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পরে ভাড়াটে হিসাবে থাকতে আসেন, এগুলোই জানাবে বেঙ্গল ফিল্ম আর্কাইভ।

জানা গিয়েছে, কিংবদন্তিদের বাসস্থান সম্পর্কে তথ্য ওয়েবসাইটের মাত্র একটি অংশ। ট্রিভিয়া, নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, জীবনীও রয়েছে সেখানে। তরুণ অমিতাভ বচ্চন কলকাতায় থাকতেন। দুর্গা পুজোর সময় কলকাতায় আসতেন পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, দক্ষিণ কলকাতায় ভারতী সিনেমা হলের কাছে রূপচাঁদ মুখার্জী লেনে। বাপ্পি লাহিড়ীর শৈশব কেটেছে বাঁশদ্রোণীতে; সেই বাড়িটি আজ জরাজীর্ণ অবস্থায়। পরিচালক ঋত্বিক ঘটক একদা সুচিত্রা সেনের প্রতিবেশী ছিলেন। সুরমা ঘটক কলকাতায় আসার পর গঙ্গাপদ মুখার্জি রোডের এই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। এই বাড়িটিকেই কোমল গান্ধারে ভৃগুর বাসস্থান হিসাবে দেখানো হয়েছিল, ইত্যাদি তথ্য ও ছবি থাকছে আর্কাইভে। এতে বাংলার চলচ্চিত্রের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে। নতুন প্রজন্ম বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।
