বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র, বাম-BJP-কে একযোগে নিশানা মমতার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রাজ্যের ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন। শীর্ষ আদালতের রায়ের পর নবান্নে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে বাম-বিজেপিকে এক সঙ্গে আক্রমণ করেন তিনি। তিনি বলেন, “আজকের সুপ্রিম কোর্টের রায় আমি পড়ে দেখলাম। বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের ভরসা আছে। বিচারপতিদের সম্মান করি। দেশের নাগরিক হিসেবে বিচারপতিকে শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি, এই রায় মেনে নিতে পারছি না। রায় উদ্ধৃত করে তিনি আরও বলেন, “যাঁরা ইতিমধ্যে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের টাকা ফেরত দিতে হবে না। যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তাঁদের বয়সে ছাড় দেওয়া হবে, তাঁরা আবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে।”
এর পরই আক্রমণ শানান মমতা বলেন, “মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম মামলায় কী হয়েছে? ৫০ জনকে খুন করা হয়েছে? কী শাস্তি হয়েছে অপরাধীদের? আমাদের রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে তো জেলে রেখে দিয়েছে। আত্মরক্ষার জন্যেও সুযোগ দেওয়া উচিত। এতগুলো শিক্ষকের ভবিষ্যৎ! ভুলে যাবেন না, এঁরা সবাই স্কুলের শিক্ষক। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দেওয়া কি বিজেপির টার্গেট? যাঁদের বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১১,৬১০ জন নবম-দশম শ্রেণিতে পড়াতেন। ৫৫৯৬ জন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াতেন। বাকিরা অন্য ক্লাসে। আপনারা জানেন, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এটি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার গেটওয়ে। তাঁদের মধ্যে অনেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের খাতা দেখছেন। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয়, ২৬ হাজারের চাকরি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে স্কুল পড়াবে কে!এতগুলো মানুষের চাকরি যাওয়ার পরে বিজেপির মন্ত্রী সুকান্তবাবু বলছেন। আমি ফেসবুকে তাঁর উক্তি দেখেছি। অযোগ্যদের জন্য যোগ্যদের চাকরি গিয়েছে, এর জন্য নাকি আমরা দায়ী। আপনারা যখন প্রথমে কেস করলেন, একবারও ভাবলেন না কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য? সরকারকেও ভাবতে দিলেন না”
রায়ের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “ওরা বলেছে তিন মাসের মধ্যে প্রসেস করতে, আমরা তা করে দেব। শিক্ষামন্ত্রীকে ইতিমধ্যে বলেছি, এসএসসিকে আমাদের ভাবনা জানাতে। এসএসসি স্বশাসিত সংস্থা। ওরা যেমন ভাল বুঝবে, নিজেদের মতো করে করবে। তবে আমরা চাই এটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক।”
ষড়যন্ত্রের দাবি করে প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম উল্লেখ করে সরাসরি বললেন, “প্রথম কলকাতা হাই কোর্টের এক বিচারপতি চাকরি বাতিলের কথা বলেছিলেন। তিনি এখন বিজেপির সাংসদ। কী হয়েছে, সবটা বুঝতে পারছেন।”
মমতা বামেদেরও নিশানা করেন, হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, “আমরাও রেকর্ড খুঁজে বের করব। একটা জেলায় কীসের বিনিময়ে চাকরি হয়েছে আমি জানি।” বিকাশরঞ্জকে দুষেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি বলেন; “বিকাশবাবু কেস করেছিলেন। তাঁর জন্যই আজ এতগুলো চাকরি গেল। উনি তো বিশ্বের বৃহত্তম আইনজীবী। কেন যে নোবেল প্রাইজ পাচ্ছেন না! আমি ভাবছি, একটা রেকমেন্ড করব।” দিল্লির বিচারপতির যশবন্ত বর্মার প্রসঙ্গও তুললেন মমতা। এত বড় দুর্নীতির পর বিচারপতি ইস্তফা দিতে না হয়, তাহলে কেন এত মানুষের চাকরি বাতিল হল, সে প্রশ্ন তুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধীকে দায়ী করে মমতা বলেন, “শুধু ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হল বললে ভুল হবে। কারণ, এঁদের সঙ্গে কয়েক লক্ষ পরিবার জড়িত। মনে রাখবেন, তাঁরা অচল হয়ে গেলে বিজেপি-সিপিএমও সচল থাকবে না। কোনও ঘটনা ঘটলে, দায়িত্ব আপনাদের হবে। আর এসবের জবাব আপনারা পাবেন।” তিনি যে চাকরিহারাদের পাশে রয়েছেন তাও জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।