রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

স্কুল কীভাবে চলবে! চরম দুশ্চিন্তায় প্রধান শিক্ষকরা

April 4, 2025 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চার শিক্ষক-শিক্ষিকাই চাকরি হারানোয় স্কুল কীভাবে চলবে, তা নিয়েই চরম দুশ্চিন্তায় প্রধান শিক্ষকরা। শুধু কী শিক্ষক? স্কুলের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালান যে শিক্ষাকর্মীরা, তাঁরাও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির কলমের খোঁচায় ‘অযোগ্য’ বলে বিবেচিত হয়েছেন। ফরাক্কা থেকে মুর্শিদাবাদ, কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি—হাহাকার পড়েছে সর্বত্র। এমনকী, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা কারা দেখবেন, তার সদুত্তর নেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কাছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চার শিক্ষক-শিক্ষিকাই চাকরি হারানোয় এই অবস্থাতেই দাঁড়িয়েছে পাঁচলার গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি মাধ্যম বিভাগ। চার শিক্ষকই নিযুক্ত হয়েছিলেন ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্যানেল থেকে। স্কুল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, শিক্ষকশূন্য হয়ে যাওয়ায় ইংরেজি মাধ্যম বিভাগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। টিচার ইনচার্জ বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘‘জানি না কী হবে! তবে, আমরা ওই শিক্ষকদের স্কুলে আসতে নিষেধ করিনি। এ বিষয়ে রাজ্য সরকার যে নির্দেশিকা দেবে, তা মেনে চলব।’’

মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় ৩২০০ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের চাকরি বাতিল হয়েছে। এমনই দাবি যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের। ফরাক্কার অর্জুনপুর হাইস্কুলেই ৬৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে ৩৬ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। একসঙ্গে এতজন শিক্ষক-শিক্ষিকা রাতারাতি চাকরিহারা হয়ে যাওয়ায় স্কুলের পঠনপাঠন নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সোহরাব আলি বলেন, ‘বর্তমানে স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। দু’টি শিফটে স্কুল পরিচালনা করতে হয়। কীভাবে স্কুল চালাব, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’
ভগবানগোলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে মোট ৬২ জন চাকরি করেন। তার মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকা ৫৬ জন। এখানে চাকরি হারিয়েছেন ২১ জন শিক্ষিকা। প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায় বলেন, ‘এখনও সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। ২০১৬ সালের প্যানেলে ২১ জনের নাম ছিল। ২১ জনেরই চাকরি গেলে স্কুল চালানোর ক্ষেত্রে খুব সমস্যায় পড়ে যাব।’
বহরমপুরের খাগড়া জিটিআইয়ের সাতজন শিক্ষক-শিক্ষিকার আর চাকরি নেই। ইসলামপুরের পাহাড়পুর ইউনিয়ন স্কুলের ১২ জন, বেলডাঙা কুমারপুর বিএনএম স্কুলের ৩৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে চাকরি গিয়েছে ১৩ জনের। আবার এদিনের রায়ে যেন সুনামি আছড়ে পড়েছে রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী গোয়েঙ্কা বিদ্যামন্দিরে। এটি খনি শহরের বুকে অন্যতম বড় গার্লস স্কুল। ছাত্রী সংখ্যা ১৪০০’র বেশি। শিক্ষিকা ছিলেন ২৭ জন। এই রায়ের পর ১২ জন শিক্ষিকার চাকরি একধাক্কায় চলে গেল। রায় জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষিকারা। কে কাকে সান্ত্বনা দেবে? স্কুল চলাকালীনই কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যান ১২ জন শিক্ষিকা। তাঁদের করুণ পরিণতির সাক্ষী থাকল পড়ুয়ারাও।

এরপরও অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কর্তাব্যক্তিরা। সভাপতিরা কেউ ফোন ধরেননি এদিন। পর্ষদের এক আধিকারিকের দাবি, তাঁদের খাতা দেখা শেষ। ট্যাবুলেশন চলছে। তবে যাঁরা খাতা দেখেছেন, তাঁরা তো অযোগ্য! তাঁদের দেখা খাতায় কীভাবে নম্বর বসবে ছাত্রছাত্রীদের মার্কশিটে? এ প্রশ্নের উত্তর নেই। গোটা রাজ্যেই এখন একই চিত্র।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#School, #teachers, #SSC, #Recruitment

আরো দেখুন