“এখানে নয়, দিল্লিতে আন্দোলন করুন”, ওয়াকফ আন্দোলনের অভিমুখ ঠিক করে দিলেন মমতা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে মুর্শিদাবাদ-সহ বেশ কয়েকটি জেলা অশান্ত হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলেই জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মুয়াজ্জেনদের সমাবেশে যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে কোন পথে লড়াই হবে? এদিন তার সুর বেঁধে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়ে মমতা বললেন, “এখানে নয়, দিল্লিতে আন্দোলন করুন।”
মমতার অভিযোগ,”পূর্বপরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক অশান্তি। প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে, অশান্তি করা হয়েছে। যদি তৃণমূলই এসব করত, তাহলে তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়কদের বাড়িতে হামলা হত না। তাঁদের আক্রান্ত হতে হত না। আমি কোনও প্ররোচনামূলক কথা বলতে আসিনি। আমি এসেছি আজ শান্তির বার্তা দিতে।” মমতার আরও অভিযোগ, “বিজেপি এজেন্সির মাধ্যমে বাইরে থেকে লোক ঢুকিয়ে অশান্তি তৈরি করা হচ্ছে। রামনবমীতে পরিকল্পনা ছিল দাঙ্গা বাঁধানোর।কিন্তু আপনারা সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে শান্তি বজায় রেখেছেন। এর জন্য ধন্যবাদ আপনাদের। মনে রাখবেন, ওরা ওয়াকফ নিয়েও অশান্তি করার চেষ্টা করবে। রুখে দিন।”
নাম না করে মুর্শিদাবাদের অশান্তির নেপথ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে আখ্যা দেন মমতা। শাহকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “এএনআই-র একটা ভিডিওয় দেখছিলাম যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে সূত্রের একটা রিপোর্ট বলছে, মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা জড়িত। তাহলে কার দায় সেটা? সীমান্ত পেরিয়ে যে বাংলাদেশিরা ঢুকেছে, তার জন্য দায়ী কে? বিএসএফ কাদের নির্দেশে কাজ করে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে। আমাদের কী দোষ? আপনার বিএসএফ কেন ঢুকতে দিল বাংলাদেশিদের?”
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, অশান্তির জেরে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য করা হবে। অশান্তিতে যাঁদের বাড়ি, ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের বাংলার বাড়ি যোজনায় বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে। যেসব দোকান পুড়েছে, ভেঙেছে, তা খতিয়ে দেখে মুখ্যসচিবকে হিসেবনিকেশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একনজরে দেখে নিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বললেন…
- আমি মিটিং ডাকিনি, ইমামরা আমাকে ডেকেছেন
ইদের পর একটি বৈঠক করার কথা আগেই হয়েছিল। ৭ এপ্রিল সময় দেওয়া হয়েছিল। পরে পিছিয়ে ১৬ তারিখ করা হয়। এই বৈঠক আমি ডাকিনি। ইমামরা আমাকে ডেকেছেন। আমরা এসেছি। - কিছু প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে গণ্ডগোল হয়েছে, সেটা মুর্শিদাবাদ আসন নয়, মালদহের আসন। কংগ্রেসের জেতা আসন। জেতার সময় জিতবে। দাঙ্গা হলে রাস্তায় বেরবে না, এটা আশা করি না। জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে থাকতে হবে।
- তৃণমূল কংগ্রেস যদি অশান্তি করত, তাহলে তৃণমূলের তিন বিধায়কের বাড়ি আক্রান্ত হত না। পার্টি অফিসও ভাঙা হত না।
- বাংলায় ওয়াকফ আইন রয়েছে ১৯৩৪ সালের। আমার যেমন যে কোনও মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে অধিকার নেই। তেমন আপনারও অধিকার নেই কারও ব্যক্তিগত বা ধর্মীয় সম্পত্তি অধিকার করা।
- সংবিধানে ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে যে কোনও ধর্ম পালনে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রে সম্পত্তি অর্জন ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকারও দেওয়া হয়েছে।
- আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা বুঝি, বাবাসাহেব আম্বেদকর তফশিলি জাতির হয়েও সংবিধানের ড্রাফ্টিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।” আর এখন , সংবিধান ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। ওয়াকফ আইন পাস করানোর ক্ষেত্রে এত তাড়াহুড়ো করার কী ছিল।
- কিছু গোদি মিডিয়া এবং BJP ফেক ভিডিয়ো দেখিয়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। হাত জোড় করে আর্জি জানাচ্ছি, BJP-র উস্কানিতে পা দেবেন না। কেউ অশান্তি তৈরির চেষ্টা করলে কন্ট্রোল করুন।
- আপনি ইউনূসের সঙ্গে গোপন মিটিং করুন। দেশের ভাল হলে খুশি হব। কিন্তু আপনাদের প্ল্যানিংটা কী। কোনও এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে দাঙ্গা করা! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র বলছে, বাংলাদেশের হাত আছে। বিএসএফ তো বর্ডার সামলায়। সেখানে কোনও অধিকার আমার নেই, রাজ্য সরকারের কাছে নেই। আপনি কেন ঢুকতে দিলেন। কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে। আপনারা চান ভেদাভেদ তৈরি করতে।
- যে এলাকাগুলিতে অশান্তি হয়েছে সেগুলি মালদা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, কংগ্রেসের জেতা আসন। কেন তারা দায়িত্ব নিচ্ছেন না।
- অমিত শাহকে কটাক্ষ বলেন, ‘আপনি কালিদাসের মতো যে ডালে বসেছেন, সেই ডাল কাটছেন। মোদী চলে গেলে কী করবেন? আপনি তো প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। সবথেকে ক্ষতি করেছেন আপনি। আমি মোদীজিকে বলব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে কন্ট্রোল করুন।
- আজকে বড় বড় কথা বলছেন যোগী। ক’জনকে লোককে এনকাউন্টারে মেরেছেন? মহাকুম্ভে কতজনের মৃত্যু হয়েছে? হিসেব দিন।
- আমাদের উপর ভরসা রাখুন। যতদিন থাকব হিন্দু-মুসলিম বিভাজন করতে দেব না। BJP সরকারে এলে তো খেতেও দেবে না। মাছ-মাংস সব বন্ধ করে দেবে।
- বিজেপি এজেন্সির মাধ্যমে বাইরে থেকে লোক ঢুকিয়ে অশান্তি তৈরি করা হচ্ছে। রামনবমীতে পরিকল্পনা ছিল দাঙ্গা বাঁধানোর।কিন্তু আপনারা সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে শান্তি বজায় রেখেছেন। এর জন্য ধন্যবাদ আপনাদের। মনে রাখবেন, ওরা ওয়াকফ নিয়েও অশান্তি করার চেষ্টা করবে। রুখে দিন।
- মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনায় BSF কেন গুলি চালাল, তা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
- মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনায় নিহত তিন জনের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের বাংলার বাড়ি প্রকল্প ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। যাঁদের দোকান ভাঙচুর হয়েছে, সেটিও হিসেব করে মুখ্য সচিবকে নির্দিষ্ট সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছেন।