মৃত্যু নিয়েও গোঁজামিলের খেলা! করোনার জেরে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা সুকৌশলে লুকিয়েছে মোদী সরকার?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রকাশ্যে বিস্ফোরক তথ্য! ধরা পড়ে গিয়েছে মোদী সরকারের গোঁজামিল। অতিমারির বছরগুলোয় নথিভুক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছে গড় মৃত্যুর সংখ্যাকে। কিন্তু করোনার কারণে মৃতদের সংখ্যার ক্ষেত্রে মিলছে না হিসাব! হিসাবের কড়ি কি বাঘ দিয়ে খাইয়েছে মোদী সরকার?
যেকোনও বছরের ক্ষেত্রে দেশে জন্ম ও মৃত্যুর সংখ্যা নথিভুক্ত করা হয় সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম-এ। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ২১ লক্ষেরও বেশি সংখ্যক মৃত্যু নাথিভুক্ত হয়েছে সেখানে। আদপে যা ২০২১ সালে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার জেরে মৃত্যুর সংখ্যার প্রায় ছয় গুণ।
ভারতে করোনার কারণে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তার প্রকৃত সংখ্যা খোঁজা কার্যত অসম্ভব! স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, সংখ্যাটা ৫.৩৩ লক্ষ। গবেষকদের মতে, মৃত্যুর সংখ্যা কম করে দেখানো হচ্ছে। করোনার জেরে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানের প্রায় চার থেকে ১২ গুণ বেশি বলে মত গবেষকদের। ২০২২ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ২০২০ এবং ২০২১ সালে ভারতে ‘অতিরিক্ত’ (গড়ের চেয়ে বেশি) মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৪৭ লক্ষ যা ওই দুই বছরে সরকারিভাবে প্রকাশিত মৃত্যু সংখ্যা ৪.৮ লক্ষের প্রায় দশগুণ।
ফি বছর জন্ম ও মৃত্যুর সংখ্যা গণনার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে ভারতে, কিন্তু কোভিডের কারণে অতিমারির বছরগুলিতে তা ব্যাহত হয়েছে। চলতি বছরের ৭ মে, ২০২১ সালের তথ্য প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান সেনসাস। মেডিক্যাল সার্টিফিকেশন অফ দ্য কস্ অফ ডেথ ২০২১ অনুযায়ী তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে। যার মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ জানা যায়।
২০২১ সালে ১.০২ কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যুর হয়েছিল, যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের (৮১.১৫ লক্ষ মৃত্যু ২০২০ সালে) চেয়ে প্রায় ২১ লক্ষ বেশি। উল্লেখ্য, ২০২০ সাল ছিল অতিমারির প্রথম বছর। ২০০৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে প্রতি বছর গড়ে ৮৩.৫ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে। মৃত্যু নাথিভুক্ত করার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে গত এক দশকে, ২০১৩ সালে ৭০ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৭৭ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৯২ শতাংশ। ২০২০ এবং ২০২১ সালে এই হার আরও বাড়তে পারত, কিন্তু এই দুই বছরের তথ্য সরকারি তরফে জানানো হয়নি অদ্যাবধি।
সাম্প্রতিক প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এবং নাথিভুক্ত মৃত্যু সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য ক্রমশ কমছে। ২০২১ সালে ১.০২ কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনাকে সেই বছরের প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যার কাছাকাছি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। বছরে গড় মৃত্যুর চেয়ে প্রায় ১৮.৭৫ লক্ষ বেশি (বছরে গড়ে প্রায় ৮৩.৫ লক্ষ মৃত্যু)। ২০২১ সালে মৃত্যু সংখ্যার এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির জন্য করোনা দায়ী হতে পারে। কিন্তু সরকারি হিসাবে, ২০২১ সালে ভারতের করোনার কারণে মৃত্যু হয়েছে ৩.৩২ লক্ষের বেশি মানুষের। সিআরএস ২০২১-র পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, দেশের করোনার কারণে মৃত্যুর পরিসংখ্যান কমপক্ষে পাঁচ গুণ কম দেখিয়েছে মোদী সরকার।
এটি শুধুমাত্র ২০২১ সালের পরিসংখ্যান। অতিমারি চলেছিল তিন বছর, ২০২০ থেকে ২০২২। ২০২২ সালের তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান স্পষ্ট নয়। ২০২০ সালে নাথিভুক্ত মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮৮.২১ লক্ষ। যা গড়ের তুলনায় প্রায় ৪.৭ লক্ষ বেশি। মোদী সরকারের হিসাবে ২০২০ সালে ভারতে ১.৪৮ লক্ষ মৃত্যু হয়েছে করোনার জন্য। এখানেও অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে কম! প্রায় তিন গুণ কম।
গড় মৃত্যু সংখ্যা ও নাথিভুক্ত মৃত্যুর সংখ্যার তারতম্যই বলে দেয়, করোনায় মৃত্যুর আদত সংখ্যা আড়াল করেছে মোদী সরকার। ভারতে করোনার কারণে কমপক্ষে ২০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু করোনার জেরে মৃত্যু নাথিভুক্ত করা হয়েছে মাত্র ৫.৩৩ লক্ষ।
করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে মেডিক্যাল সার্টিফিকেশন অফ দ্য কস্ অফ ডেথ (MCCD) ২০২১-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে। দেশে নথিভুক্ত মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশেরও কম (প্রায় ২৩ শতাংশ) চিকিৎসাগতভাবে স্বীকৃত। প্রায় ২৩.৯৫ লক্ষ চিকিৎসাগতভাবে স্বীকৃত মৃত্যুর এই সীমিত সংখ্যার মধ্যেও, ২০২১ সালে করোনার কারণে মৃত ৪.১৩ লক্ষে ধরা হয়। যদি ১.০২ কোটি মৃত্যুর সবকটি চিকিৎসাগতভাবে স্বীকৃত হত, সেক্ষেত্রে সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হতে পারে। এহেন পরিসংখ্যান একটিই প্রশ্ন তুলছে, তবে কি মোদী সরকারের নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ইচ্ছে করে দেশের করোনায় মৃত্যু হওয়া মানুষদের যথাযথ সংখ্যা আড়াল করেছে?