বর্ষা আসন্ন; বন্যা মোকাবিলায় সতর্ক সেচ দপ্তর

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, সকাল ৯টা: বর্ষা না এলেও নিম্নচাপের কারণে গত সপ্তাহ ২ ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গ সহ বাংলার বেশ কয়েকটি জেলায়। কেরলে ইতিমধ্যেই বর্ষা প্রবেশ করেছে। বাংলাতেও ঢুকবে আগামী জুনের প্রথম-দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই। তাই ইতিমধ্যেই সচেতন হয়ে গেছে রাজ্যের সেচ ও জলপথ দপ্তর।
রাজ্যে যাতে বন্যা পরিস্থিতি না হয় তাই আগে থেকেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সম্প্রতি ডিভিসি, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন ও ‘ইভিআরআরসি’-এর সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী মানস ভূঁইয়া। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা, একাধিক জেলার জেলাশাসক, এসডিও, বিডিও সহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের পর সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের প্রায় ৪৩ শতাংশ এলাকা বন্যাপ্রবণ। প্রতিবেশী রাজ্য এবং ভুটান থেকে বিপুল পরিমাণ জল এসে পড়ে বাংলায়। ঝাড়খণ্ডে দামোদর ও বরাকর নদীর অববাহিকায় তিন ঘণ্টা অন্তর জলস্তর ও বৃষ্টিপাতের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সেইসঙ্গে আগামী সাত দিনের কত জল ছাড়া হবে তার হিসেবও রাজ্যকে জানানো হবে। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।এর পাশাপাশি বিহার সরকারের কাছেও অনুরোধ করা হয়েছে যাতে কোশী ও গন্ডক ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার তথ্য নিয়মিত পাঠানো হয়।কারণ এই জলই মালদা ও মুর্শিদাবাদের গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা তৈরি করে।
কি কি পদক্ষেপ:
সেচদপ্তর নিয়মিত বিহার, ঝাড়খণ্ড, সিকিম ও কেন্দ্রীয় জল আয়োগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবে।
চিহ্নিত দুর্বল বাঁধগুলির ১১৬টি সংস্কারের কাজ চলছে। এজন্য মোট ১৪৫.৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
বাঁধ মেরামতির পাশাপাশি পাম্পিং স্টেশন, সুইস-রেগুলেটর সংস্কার ও বালি, মাটি মজুতের কাজও চলছে।
রাজ্যে মোট ১০ হাজার ৫৮৪ কিমি নদীবাঁধ রয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার ৫২৯ কিমি বাঁধ ইতিমধ্যেই ইট, কংক্রিট বা বোল্ডার দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে ৬৭ কিমি সমুদ্রবাঁধ, ৮৪০৯ কিমি নিকাশি খাল, ২৮০০টি সুইস ও ১৯টি পাম্পিং স্টেশন।
২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৯৯১টি নদীবাঁধ ও ৪৮টি সমুদ্রবাঁধ এলাকাল ও ভেঙে পড়া ১৪২টি বাঁধের মেরামতির কাজ শেষ হয়েছে।
জলসম্পদ ভবনে চালু হয়েছে কেন্দ্রীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
রাজ্যজুড়ে ৩৭টি রিজিওনাল ও ডিভিশনাল কন্ট্রোল রুমও চালু করা হচ্ছে।
খুঁটিনাটি তথ্য পেতে ১৯৮টি বন্যাপ্রবণ ব্লকে কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করা হয়েছে ।
কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যৌথ সমীক্ষায় শহরের নিকাশি খালগুলির সাফাইকাজ চলছে।
মন্ত্রীর কথায়, ২০১৬ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার সেচ খাতে এক টাকাও দিচ্ছে না, রাজ্য নিজের সামর্থে কাজ করছে। দিনকয়েক আগে উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠক থেকেও একই অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ষার আগে বিপর্যয় রুখতে প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভুটানের বাঁধ থেকে জল ছাড়লে বাংলা ডোবে। বন্যা মোকাবিলায় কেন্দ্র টাকা দেয় না। সব রাজ্য টাকা পেলেও বাংলা বঞ্চিত।” বন্যা পরিস্থিতিতে সমস্ত টিম যেন একসাথে বাংলার মানুষের পাশে থাকে সেই নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।