ভাসছে উত্তর-পূর্ব ভারত, লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত ৩৪

নিউ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি,১০:৪৮: উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত ভাসছে। প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত অসম, মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম। রবিবার দিনভর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে। বন্যা এবং ভূমিধসের কারণে বহু এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সড়ক যোগাযোগ, রেল পরিষেবা বিপর্যস্ত, কয়েক লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। গত দু’দিনে দুর্যোগের কারণে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
রবিবার ব্রহ্মপুত্র, বরাক সহ রাজ্যের ১০টি নদীর জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। অরেঞ্জ বুলেটিন জারি করেছে সেন্টার ওয়াটার কমিশন। অসমের ১৯টি জেলার ৭৬৪টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর জলের তলায় চলে যাওয়ায় ঘরছাড়া হয়েছে বহু মানুষ। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ অসমের কাছাড় জেলায়। প্রায় এক লক্ষ মানুষ সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রীভূমি জেলায় ৮৩ হাজার, নগাঁও জেলায় ৬২ হাজার, লখিমপুর জেলায় ৪৬ হাজার। অসম রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ১৫৫টি ত্রাণশিবিরে ৫৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
ভারী বৃষ্টির জেরে বরাইগ্রাম-দুলবছেড়া সেকশনের অনেক রেললাইনই জলের নীচে চলে গিয়েছে। দুলবছেড়া-শিলচর, বদরপুর-দুলবছেড়া-বদরপুর যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে নেমেছে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, পুলিশ, দমকল এবং জরুরি বিভাগের কর্মীরা। উদ্ধারকাজে ভারতের বায়ুসেনাও নামানো হয়েছে।
ভারী বৃষ্টিতে মণিপুরের দুই জেলা ইম্ফল পূর্ব এবং ইম্ফল পশ্চিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সে রাজ্যে ১৫০০ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে এনেছে সেনা। মণিপুরে বৃষ্টিতে ৮০০টির বেশি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ৩ হাজার ৮০২ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অরুণাচল প্রদেশে ভূমিধসের জেরে ৯ জনের প্রাণ গিয়েছে। ভারী বৃষ্টি এবং ভূমিধসের জেরে উত্তর সিকিমে আটকে পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। মেঘালয়ে হড়পা বানে বিপর্যস্ত ১০টি জেলা। মেঘালয় ও অসমের মধ্যে যোগাযোগের মূল রাস্তা ১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ভেসে গিয়েছে। তুরা থেকে গুয়াহাটরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। মিজোরামের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হল সেরচিপ। রবিবার ভূমিধসের জেরে এই জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
ত্রিপুরাতেও বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। রবিবার মাত্র তিন ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় সরকারি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৩০০ পরিবার। রাজধানী আগরতলার অনেক এলাকাই জলমগ্ন। জল সরাতে পাম্প চালু করা হয়েছে। রবিবার থেকে ত্রিপুরায় পাঁচদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আইএমডি। সোমবার সকালে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে। ভারী বৃষ্টির সতর্কতাও দিয়েছে হাওয়া অফিস। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।