তৃণমূলে খুশির আমেজ, যোগ দিতে চায় ৬ লক্ষ যুবক-যুবতী
সংসদীয় রাজনীতির প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বাড়াতেও সহায়ক ভূমিকা নেবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

একুশের ভোট-বাদ্যি বাজিয়ে দিলেন প্রশান্ত কিশোর। তাঁর কুশলী চালে বঙ্গে বিজেপি কতটা বেকায়দায় পড়বে, তা সময় বলবে। আপাতত তৃণমূলের বাড়তি ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাজিমাত টিম পিকের। প্রশান্তের ‘আইপ্যাক’ (ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি)-এর তত্ত্বাবধানে রাজনীতিতে আসার আবেদন করেছেন বাংলার একঝাঁক তরুণ মুখ। সংখ্যাটা ছ’লক্ষের কাছাকাছি।
ভার্চুয়াল কোনও মাধ্যম নয়। ‘মিসড কল’ দিয়ে সদস্য সংগ্রহের অভিযানও নয়। দস্তুরমতো সম্পূর্ণ জীবনপঞ্জি দিয়ে ‘জনসেবা’য় নাম লিখিয়েছেন বাংলার তরুণরা। তাঁদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে এক লক্ষ যুবক-যুবতীকে নিয়োগ করার কর্মসূচি নিয়েছে ‘আইপ্যাক’। কাল, রবিবার দমদম, বারুইপুর ও বহরমপুর থেকে শুরু হচ্ছে সেই কর্মসূচি। ধাপে ধাপে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে আবেদনকারীদের নিয়োগ করা হবে। এরপর ভোট-কুশলী প্রশান্তের নেতৃত্বে চলবে টানা প্রশিক্ষণ শিবির। সেখান থেকেই গড়ে তোলা হবে তৃণমূলের ‘তরুণ ব্রিগেড’। জেলায় জেলায় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে তারাও থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সাফল্য প্রচারের অন্যতম মুখ। ‘আইপ্যাক’-এর এই উদ্যোগ শুধুমাত্র তৃণমূলের বাড়তি শক্তিবৃদ্ধি করবে না। সংসদীয় রাজনীতির প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বাড়াতেও সহায়ক ভূমিকা নেবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
তৃণমূল নেতৃত্বও সেটাই মনে করছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী কিংবা মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি আবু তাহের খান সহ একাধিক জেলা নেতৃত্বের কথায়, ‘রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে বর্তমান প্রজন্মের উপর। তরুণরা যত বেশি রাজনীতিতে আসবেন, তত বেশি শক্তিশালী হবে দেশ। আর তাঁদের কাছে এমন একজন নেতা-নেত্রীকে তুলে ধরতে হবে, যাঁর নীতি-আদর্শকে তাঁরা পাথেয় করতে পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন সেই নেত্রী, যাঁর আদর্শের টানে বাংলার নতুন প্রজন্ম তৃণমূলের উপর আস্থা রাখছে।’
একুশের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে এখন থেকে ঘর গোছাতে শুরু করেছে তৃণমূল। সাংগঠনিক স্তরে ব্যাপক রদবদল হয়েছে সম্প্রতি। কলকাতা সহ জেলার বিভিন্ন সাংগঠনিক পদে তরুণ প্রজন্মের গুরুত্ব বেড়েছে। এর পিছনে টিম পিকের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। কারণ, তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই ভোটের রণকৌশল নির্ধারণের কাজ করছে ‘আইপ্যাক’। তাদের ‘ইউথ ইন পলিটিক্স’ নামে একটি প্রচারাভিযানও চলছে দেশজুড়ে। নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে টানতে বাংলায় সেই অভিযানকে আরও জোরদার করেছেন প্রশান্ত কিশোর। রাজনীতিতে কেরিয়ার গড়ার বার্তা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পেজও খোলে ‘আইপ্যাক’। ১৮-৩৫ বছরের যুবক, যুবতীরা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আবেদন করতে পারবেন সেখানে। ‘আইপ্যাক’-এর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিদিন চার হাজারেরও বেশি যুবক-যুবতী রেজিস্ট্রেশন করেছেন বলে খবর। সব মিলিয়ে আবেদনের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ছ’ লক্ষ। তাঁদের মধ্যে বাছাই করা একঝাঁক নতুন মুখকে রবিবার নিয়োগ করা হবে দমদমের একটি প্রেক্ষাগৃহে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই সভায় হাজির থাকবেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও যুব সভাপতি দেবরাজ চক্রবর্তীর মতো নেতারা।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, নতুন মুখকে তৃণমূলে নিয়ে আসার পাশাপাশি অন্য দলগুলির নেতা-কর্মীদের উপরও নজর রয়েছে ‘আইপ্যাক’-এর। বিশেষ করে যাঁদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, তাঁদের তৃণমূলে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে টিম পিকের। এমনকী, দীর্ঘদিন ধরে দলে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন, এমন নেতা-কর্মীকে সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা শুরু করেছে তারা। ‘আইপ্যাক’-এর তরফে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হচ্ছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও আলোচনা করছে টিম পিকে। তবে, দলে যোগদানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই।