তিন বার গোল শোধ করেও গোয়ার বিরুদ্ধে জিততে পারল না ইস্ট বেঙ্গল
ম্যাচটা ছিল দুটো লাস্ট বয়ের মধ্যে। ম্যাচের আগে আই এস এল টেবলে ইস্ট বেঙ্গল ছিল দশ নম্বরে। আর গোয়া ছিল এগারো নম্বরে। কিন্তু ম্যাচের পর দুই দলের জায়গা পরিবর্তন হয়ে গেল। দুই পয়েন্ট নিয়ে শুরু করেছিল লাল হলুদ। সেই পয়েন্টেই শেষ করল। আর প্রথম তিন ম্যাচে হেরে যাওয়া গোয়া জয়ের মুখ দেখে দশ নম্বরে চলে গেল। ইস্ট বেঙ্গল নেমে গেল এগারো নম্বরে। ম্যানুয়েল দিয়াজের দলের পক্ষে বলার যেটা তা হল তিন বার পিছিয়ে পড়েও তারা সমতা ফিরিয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারল না। এবারের আই এস এল-এ রেফারিং খুব খারাপ হচ্ছে। মঙ্গলবার গোয়ার ভাস্কোর তিলক ময়দানে রেফারিংয়ের শিকার হল ইস্ট বেঙ্গল। প্রথমার্দ্ধের মাঝামাঝি বক্সের বাইরে শেরাটনকে ফাউল করেন সৌরভ দাস। রেফারি প্রথমে বক্সের বাইরে ফ্রি কিক দিয়েছিলেন। কিন্তু সহকারি রেফারির সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। এবং সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন জর্জ ওরতিজ।
তবে এই ব্যাপারটা বাদ দিলে গোয়া কিন্তু যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে। কিক অফ-এর পর থেকেই তারা ঝড় তুলেছিল ইস্ট বেঙ্গল মাঝ মাঠে। তখন গোয়ার বল পসেসন ৭২ শতাংশ। এবং সেই ঝড় সামাল দিতে বেশ চাপে পড়ে যায় ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সে। টমিস্লাভ মার্সেলা এবং ফ্রানিও পার্সের সেন্ট্রাল ডিফেন্স শেষ পর্যন্ত নতজানু হল গোয়ার কাছে। বক্সের বাইরে একটা লুজ বল ধরে আলবার্তো নোগুয়েরা বক্সের বাইরে থেকেই উঁচু শটে হার মানান শুভম সেনকে। ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ১২ মিনিট। গোলের খোঁচা খেয়ে একটু একটু করে আক্রমণে যেতে শুরু করে ইস্ট বেঙ্গল। এবং ২৭ মিনিটে তারা গোলটি শোধও করে দেয়। বক্সের বাইরে থেকে আমিরের ফ্রি কি ডিফেন্সিভ ওয়ালে লেগে ফিরে আসার পর বক্সের বাইরে থেকেই বাঁ পায়ের দুরন্ত শটে গোল করেন আন্তোনিও পেরোসেভিচ। বল পোস্টে লেগে গোলে ঢুকে যায়। এর পর ৩২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোয়ার গোল করার কথা তো আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু সেই গোলটা শোধ করে দেয় ইস্ট বেঙ্গল। ৩৭ মিনিটে আমিরের ফ্রি কিক গোয়ার গোলকিপার ধীরাজ সিংয়ের সামনে পড়ে গোলে ঢুকে যায়। বিরতির আগেই ইস্ট বেঙ্গল আবার পিছিয়ে পড়ে। কর্নার থেকে গোল খেতে হয় তাদের। এই নিয়ে পাঁচটা ম্যাচে কর্নার থেকে হাফ ডজন গোল খেল ইস্ট বেঙ্গল। তবে এদিনের গোলটা আত্মঘাতী। কর্নার থেকে দেবেন্দ্রর হেড পেরোসেভিচের হাঁটুতে লেগে গোলে চলে যায়।
বিরতির সময় ২-৩ পিছিয়ে থাকা ইস্ট বেঙ্গল বিরতির পরেই গোল শোধ করে দেয়। ৬০ মিনিটে গ্লেন মার্টিন্সের ব্যাক পাস ধরে চমৎকার সোলো রানে দুজন ডিফেন্ডারকে বেকায়দায় ফেলে ডান পায়ের জোরালো শটে গোল করেন পেরোসেভিচ। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর জোড়া গোল করেও দলকে একটা পয়েন্টও দিতে পারলেন না। ৮০ মিনিটে আবার গোল খেয়ে যায় ইস্ট বেঙ্গল। ডান দিক ধরে দুরন্ত দৌড়ে ওরতিজ বল বাড়ান নংদাম্বাকে। তিনি ডামি রান দিলে বল চলে যায় নোগুয়েরার কাছে। পিছন থেকে রাজু গায়কোয়াড় ছুটে এসেও দলের গোল খাওয়া বাঁচাতে পারেননি।
লাল হলুদ কোচ ম্যানুয়েল দিয়াজ প্রতিদিনই প্রথম এগারোয় প্রচুর বদল আনছেন। এদিনও গত ম্যাচে যারা চেন্নাইয়ের কাছ থেকে একটা পয়েন্ট এনেছিল তাদের মধ্যে পাঁচজনকে বসিয়ে দেন। কিন্তু বিরতির পর টমিস্লাভকে বসানোর কোনও মানে হয় না। তাঁর বদলি আদিল খান সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল। আর শুধু লম্বা থ্রো ইন-এর জন্য রাজু গায়কোয়াড়কে খেলাবার কোনও মানে হয় না। বিরতির একটু আগে ড্যানিয়েল চিমাকে নামিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এই নাইজিরীয়ের শারীরিক সক্ষমতা ভাল। কিন্তু কোনও স্কিল নেই। চোট থাকায় খেলতে পারেননি মহম্মদ রফিক। তাঁর অভাব অবশ্যই অনুভূত হয়েছে। খারাপ লাগছে পেরোসেভিচের জন্য। দুটো গোল করেও টিমকে জেতাতে পারলেন না। আর ওদিকে দুটো গোল করে আলবার্তো নগুয়েরা টিমকেও জেতালেন এবং সে জন্য ম্যাচের সেরার পুরস্কারটাও নিয়ে গেলেন।
ইস্ট বেঙ্গলের পরের ম্যাচ রবিবার কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। তত দিন জয়হীন ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আর কী-ই বা করার থাকতে পারে। পর পর তিন ম্যাচে হারা টিম হারিয়ে দিয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গলকে। এই আফসোস তারা মনে হয় মন থেকে কিছুতেই মানতে পারবেন না। কিছুতেই না।