নেই প্রথম ডোজ নেওয়ার লোক, রাজ্যে বাতিল জাইকোভ ডি টিকাকরণ
আয়োজন সবই আছে। কিন্তু প্রথম ডোজের টিকা নেবে কে? ফলে রাজ্যে বাতিল হয়ে গেল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তিন ডোজের জাইকোভ ডি’র টিকাকরণের পাইলট প্রজেক্ট। মুর্শিদাবাদে এই টিকার এক লক্ষ ডোজ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটিমাত্র জেলায় এক লক্ষ ডোজ টিকা দেওয়া দূরস্থান, গোটা বাংলাতেও রোজ এক লক্ষ প্রথম ডোজ দেওয়া যাচ্ছে না গত সাতদিন ধরে।
সূত্রের খবর, বাংলায় ১৪ ডিসেম্বর ৫১ হাজার ৫১৩ ডোজ, ১৫ ডিসেম্বর ৩৭ হাজার ২৩ ডোজ, ১৬ ডিসেম্বর ২৯ হাজার ২৯৫ ডোজ, ১৭ ডিসেম্বর ৪২ হাজার ৫৩০ ডোজ এবং ১৮ ডিসেম্বর ৩০ হাজার ৬০৩ প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। হেলথ ডিরেক্টরেটের টিকাকরণের শীর্ষকর্তা ডাঃ অসীম দাস মালাকার বলেন, আপাতত জাইকোভ ডি দেওয়ার প্রকল্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম ডোজ নেওয়ার লোক ক্রমেই কমছে। এই অবস্থায় একটি জেলার জন্য এতগুলি ডোজ টিকা দেওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়িত করা কঠিন হবে।
তবে এরই মধ্যে আশার খবর দুটি। এক, রবিবার রাতের মধ্যে বা সোমবার সারা দিনের যে কোনও সময়ে রাজ্য স্পর্শ করতে চলেছে ১০ কোটি টিকাকরণের (দুটি ডোজ মিলিয়ে) মাইলস্টোন। মধ্যপ্রদেশ ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেললেও, রাজ্য এখনও কোভিড টিকাকরণে দেশে রয়েছে তিন নম্বরে। দ্বিতীয়টি হল, সিরাম ইনস্টিটিউটের বাচ্চাদের ভ্যাকসিন কোভোভ্যাক্সের চাহিদামতো প্রথম কনসাইনমেন্ট আগামী মাসেই হাতে পেয়ে যেতে পারে কেন্দ্র। সেক্ষেত্রে শিশুদের টিকাকরণ শুরু হতে আর দ্বিধা না হওয়ারই কথা।
এদিকে জাইকোভ ডি দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিলের প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি রাজ্যে প্রথম ডোজ দেওয়া প্রায় শেষ? পরিসংখ্যান কিন্তু তা বলছে না। রবিবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে প্রায় ৬ কোটি ৪৩ লক্ষ প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। ১৮ ঊর্ধ্ব বয়সের ৭ কোটি ২৬ লক্ষ বঙ্গবাসী প্রথম ডোজ পাওয়ার যোগ্য। হিসেবমতো আরও ৮৩ লক্ষ মানুষেরও প্রথম ডোজ পাওয়ার কথা। কিন্তু পরিসংখ্যান আর বাস্তব যে মিলছে না! আসলে অনেক ঢিমেতালে চলছে প্রথম ডোজের টিকাকরণ। টিকাকরণ কেন্দ্র খুলে, টিকার ভায়াল নিয়ে ভ্যাকসিনেটর বসে থাকলেও লোকই আসছে না প্রথম ডোজ নিতে। ফলে বহুদিন আগে সেই যে ৮৮-৮৯ শতাংশ রাজ্যবাসী প্রথম ডোজ পেয়েছিলেন, সেই হিসেবই এগচ্ছে ঢিমেতালে। যেটুকু টিকাকরণ হচ্ছে, সিংহভাগই দ্বিতীয় ডোজের।
উদাহরণস্বরূপ, ১৪ ডিসেম্বর প্রথম ডোজ ৫১ হাজার ৫১৩ জন পেলেও দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছিলেন ১০ গুণ বেশি মানুষ—৫ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭৮৯ জন। ১৫ ডিসেম্বর প্রথম ডোজ পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ২৩ জন। ওইদিন দ্বিতীয় ডোজ পান ৪ লক্ষ ২৬৮ জন। ১৮ ডিসেম্বরের হিসেবও বলছে একই কথা। ৩০ হাজার মানুষ প্রথম ডোজ পেলেও দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১০ গুণের বেশি মানুষ—৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৬৭ জন।