তারাপীঠে গড়ে উঠতে চলেছে সিল্ক হাব
তীর্থক্ষেত্র তারাপীঠে এবার গড়া হচ্ছে শিল্পতালুক। রাজ্য সরকারের নির্দেশে ১০০দিনের কাজে বীরভূম জেলা প্রশাসন তারাপীঠে সিল্ক হাব গড়ে তুলতে চলেছে। শুধু সিল্ক হাবই নয়, লাগোয়া নলহাটি-২ ব্লকের তিথিডাঙা গ্রামে হবে গুটিপোকা থেকে রেশম সুতো তৈরির কাজ। এজন্য সেখানে তৈরি হয়েছে ওয়ার্ক শেড। একইভাবে বোলপুরে গড়ে উঠবে তসর হাব। জানুয়ারির শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরভূমে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসার সম্ভবনা রয়েছে। তখনই তাঁর হাত দিয়ে এগুলির উদ্বোধন করা হবে বলে জেলাশাসক বিধান রায় জানান। বীরভূমে রেশম শিল্পের প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে। জেলায় রেশম ও তসর শিল্পে বহু মানুষ যুক্ত। রামপুরহাট-২, মুরারই-২, নলহাটি-২ ব্লকের মাড়গ্রাম, বসোয়া, বিষ্ণুপুর, লোহাপুর, কোটাসুর, তারাপুর, ভদ্রপুর, তিথিডাঙা, তেঁতুলিয়া রেশম চাষের জন্য বিখ্যাত। ওই গ্রামগুলিতে রেশমগুটি ও তুঁতপাতার চাষ হয়। সিউড়ির রাজনগর, তাঁতিপাড়া, রীরসিংহপুর, করিধ্যা গ্রামে বহু মানুষ তসরের সুতো তৈরি করেন। তাঁদের থেকে সুতো নিয়ে অনেকে শাড়ি সহ নানা পোশাক তৈরি করেন। এবার তাঁদের একত্রিত করে এই শিল্পের প্রসার ঘটাতে চলেছে রাজ্য সরকার। নলহাটি-২ ব্লকের কলিঠা গ্রামে সরকারি খামারে পরীক্ষামূলক রেশম চাষ হয়। এবার ১০০দিনের কাজে রেশম চাষে যুক্ত সাধারণ চাষি, ফার্ম ও স্বনির্ভর গোষ্ঠী সবাইকে উন্নততর রেশম গুটি দেওয়া হবে। তা থেকে সুতো তৈরির জন্য তিথিডাঙায় রেশম ক্লাস্টার গড়া হবে। ইতিমধ্যেই সেই জমিও চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। রেশম শিল্পে যুক্ত সরাইকে এই ক্লাস্টারভুক্ত করা হবে। জেলাশাসক বলেন, ইতিমধ্যেই সিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তাঁরা আগ্রহীদের কাছে সেই সুতো কিনবে। পাশাপাশি এই শিল্পে যুক্ত শিল্পীরা কাপড় তৈরি করবেন। মূলত তারাপীঠকে কেন্দ্র করেই এই উদ্যোগ। উৎপাদিত কাপড় যাতে এক ছাতার তলায় এনে বিক্রি করা যায় সেজন্য এই হাব গড়া হবে। আজ, মঙ্গলবার জেলাশাসক সরেজমিনে সেই হাবের জমি চিহ্নিত করবেন।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ১০০দিনের কাজের প্রকল্পে নতুন কিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশ মোতাবেক এই উদ্যোগ। জেলার মধ্যে তারাপীঠে নিত্যদিন হাজার হাজার পর্যটক আসেন। বহু পর্যটক রেশমের শাড়ি সহ জামা-কাপড় কিনতে নলহাটি, রামপুরহাট, মাড়গ্রাম যান। তাঁরা এবার তারাপীঠেই পছন্দসই কাপড় কিনতে পারবেন। রাজনগরের তাঁতিপাড়া, রীরসিংহপুর, করিধ্যা তসর শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাপড় সহ জামা, কুর্তা, সালোয়ারে হাতে ছবি আঁকছেন তসর শিল্পীরা। বোলপুর, দুবরাজপুরের মামা-ভাগ্নে পাহাড় বা বক্রেশ্বর ধামে বেড়াতে এসে অনেকেই তসর শিল্পীদের কাছ থেকেই সরাসরি কম দামে শাড়ি, সালোয়ার বা অন্য জিনিস কেনেন। তাঁদের সুবিধায় বোলপুরে গড়া হচ্ছে তসর হাব। জেলাশাসক বলেন, যেখানে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয় যেমন, সোনাঝুড়ি বা আমার কুটির লাগোয়া এলাকায় সেই হাব তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতিহাস, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ বীরভূমের দর্শনীয় স্থানগুলিকে তুলে ধরতে দু’টি সার্কিটে ভাগ করা হচ্ছে। একটি তারাপীঠ, অন্যটি বোলপুর। তারাপীঠকেন্দ্রিক সার্কিটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘একতারার সুরে’। আর বোলপুরকেন্দ্রিক সার্কিটের নাম রাখা হয়েছে ‘মাদলের তালে’। চালু হচ্ছে অনলাইন পোর্টালও। পর্যটকরা বাড়িতে বসেই এক ক্লিকেই সেইসব স্থানের সব খুঁটিনাটি তথ্য জেনে ঘুরতে আসতে পারবেন। এবার তারাপীঠ ও বোলপুরকে কেন্দ্র করে সিল্ক ও তসর হাব হলে জেলায় পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটনের সঙ্গে এই শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এই শিল্পে যুক্ত সবার আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোর যথেষ্ট উন্নতি হবে।