করোনার জের, বীরভূমের জয়দেব মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের
করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের জন্য এবছরও মকর সংক্রান্তিতে বীরভূমের ঐতিহ্যবাহী জয়দেব-কেন্দুলির মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন। মকরের পুণ্যস্নানে অনুমতি দেওয়া হলেও জারি করা হবে কঠোর বিধি-নিষেধ। তবে অজয় নদের চরে বাউল-ফকিরদের আখড়া হবে কি না, তানিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। স্বভাবতই এবারও মেলা না হওয়ার খবরে মন খারাপ পুণ্যার্থী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দা সহ লোকগান প্রেমীরা।
প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে মকর সংক্রান্তি তিথিতে ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব গ্রামে অজয় নদের চরে বসে কেন্দুলি মেলা। এটি জয়দেব-কেঁদুলি মেলা হিসেবে বিখ্যাত। এই মেলা মূলত আউল-বাউল, ফকিরদের জন্য বিখ্যাত। শতাব্দী প্রাচীন এই মেলা আদতে আউল-বাউল, ফকিরদের মিলনমেলা। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাউল-ফকিররা মকর সংক্রান্তির দিন এখানে মিলিত হন, মত বিনিময় করেন। আউল-বাউল, পীর-ফকিরদের গানের নানা ধারারও আদান-প্রদান হয়।
এই জয়দেবেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবি জয়দেব। তিনি ছিলেন রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি। কথিত আছে, কবি জয়দেব গঙ্গাস্নানের জন্য এই সংক্রান্তি তিথিতে কয়েকশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেন। এক বছর অসুস্থতার জন্য তিনি গঙ্গা স্নানে যেতে পারছিলেন না। সে সময় স্বপ্নাদেশে তিনি জানতে পারেন, জয়দেবের অজয় নদে মিলিত হয়ে কদম্বখণ্ডীর ঘাটে আসবেন গঙ্গা। তারপর থেকেই মনে করা হয়, মকর সংক্রান্তি তিথিতে জয়দেবের অজয় নদের কদম্বখণ্ডীর ঘাটে দেবী গঙ্গা ফিরে আসেন। ১৬৮৩সালে বর্ধমানের রাজার উদ্যোগে জয়দেবে তৈরি হয় রাধা-বিনোদের মন্দির। মকর সংক্রান্তির দিন এখানে পুণ্যার্থীরা স্নানের মাধ্যমে পুণ্য সঞ্চয় করেন। এজন্য প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ওই দিনটিতে জয়দেবে ভিড় করেন। অজয় নদের চরে থাকা আউল, বাউল, ফকিরদের আখড়ায় দিনরাত চলে কীর্তন, বাউল গান। নির্দিষ্ট তিথি-সময় মেনে চলে মকরের স্নানও। রাতভর চলে মেলা। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে পুলিস ও জেলা প্রশাসন।
নতুন বছরের শুরুতেই করোনার বাড়বাড়ন্তের জন্য রাজ্য সরকার বিধি-নিষেধ জারি করে। তার প্রেক্ষিতে বীরভূম জেলা প্রশাসনও এই মেলা এবছর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। এপ্রসঙ্গে বোলপুরের মহকুমা শাসক অয়ন নাথ বলেন, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় এবার জয়দেব মেলা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে মকর স্নান হবে কি না তানিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বাউল-ফকিরদের আখড়া করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। এই দু’টি বিষয়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে জেলাশাসকের পরামর্শমতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি মকর সংক্রান্তি তিথিতে স্নানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে থাকবে কঠোর বিধি-নিষেধ।
উল্লেখ্য, এই জয়দেব মেলার উপর ইলামবাজারের অর্থনীতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। দূরদূরান্তের বহু ব্যবসায়ী দু’পয়সা বাড়তি রোজগারের আশায় এই মেলায় যোগ দেন। কিন্তু এবছরও মেলা না হওয়ার খবরে তাঁরা হতাশ।
এ