রোগীদের ভিড় কমাতে ২২৮টি পুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নয়া ভবন গড়ার উদ্যোগ রাজ্যের
রাজ্যের পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রোগীদের ভিড় উত্তরোত্তর বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভরসা জুগিয়েছে গ্রাম-শহরের সিংহভাগ মানুষকে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার সাব হেলথ সেন্টারের পরিকাঠামোর খোলনলচে বদলাতে চাইছে রাজ্য সরকার। ঘুপচি বাড়িতে পরিকাঠামোহীন অবস্থায় থাকা এইসব উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দোতলা ভবন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেখানে রোগী ও পরিজনদের বসার বেঞ্চ, টিকাকরণ, রোগীর নমুনা সংগ্রহের মতো পৃথক বন্দোবস্ত থাকবে। প্রতিটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করতে খরচ হবে ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে এইসব পুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাসে গড়ে ১০০ জন মানুষ আসতেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই চিত্র আমূল বদলেছে। গত বছর আগস্ট থেকে অক্টোবরের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, মাসে রাজ্যের প্রতিটি পুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গড়ে রোগী এসেছে ১ হাজার ৩১৭ জন। যতদিন যাচ্ছে, রোগীর চাপ ততই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে এইসব উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো দ্রুত উন্নয়ন করতে চাইছে রাজ্য সরকার। গত ১৯ জানুয়ারি রাজ্য নগরোন্নয়ন সংস্থার (সুডা) ডিরেক্টর সুপ্রিয় ঘোষাল মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেটের (এমইডি) চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় মোট ২২৮টি নতুন হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার তৈরি করা হবে। এই নতুন ভবন তৈরির দায়িত্ব এমইডি’কে দেওয়া হয়েছে। এমইডি সুডাকে ভেটেড এস্টিমেট পাঠালে প্রশাসনিক ও আর্থিক অনুমোদন দেওয়া হবে। ওই অনুমোদন মেলার সাতদিনের মধ্যে ডাকতে হবে টেন্ডার। এরপর ৫২ দিনের মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারকে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দিতে হবে। কাজ শুরুর পর প্রতিমাসের সাত তারিখের মধ্যে কাজের অগ্রগতির তথ্য সুডাকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ আসার পর জেলায় জেলায় জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, দোতলা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক ও দোতলায় যথাক্রমে ৭১৯.৪৬ বর্গফুট করে জায়গা থাকবে। একতলায় রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের জন্য থাকবে ওয়েটিং রুম, চিকিৎসক ও নার্সের পৃথক ঘর, রোগী দেখার ঘর, পুরুষ ও মহিলা রোগীদের জন্য পৃথক টয়লেট ও ওষুধের স্টোররুম। দোতলাতেও বসার জায়গা, টিকাকরণ কেন্দ্র, ওষুধ ও ভ্যাকসিন রাখার বড় স্টোর, রোগীর নমুনা সংগ্রহের ঘর, উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মহিলা ও পুরুষ কর্মীদের জন্য পৃথক শৌচালয় ও বারান্দা থাকবে। এই দোতলা বাড়ি তৈরি করতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ৩০ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭১১ টাকা। তবে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি এলাকার জন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩১ লক্ষ টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে পুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি শহরের বাসিন্দাদের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের টিকাকরণের পাশাপাশি চিকিৎসকরা প্রতিদিনই সুগার, উচ্চ রক্তচাপ সহ বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা করছেন। উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নত হলে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের ভরসা আরও বাড়বে।