আউশগ্রামের কাঁথাস্টিচ পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে
আউশগ্রামের মহিলাদের হাতের তৈরি কাঁথাস্টিচের কদর বাড়ছে বিদেশেও। মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো ভিন রাজ্যের বাজারেও চাহিদা রয়েছে কাঁথাস্টিচের বিছানার চাদরের। সংসারের কাজ সামলে ছুঁচ ও সুতো দিয়ে বাড়ির মহিলাদের তৈরি কাঁথা স্টিচের বিছানার চাদরের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দর উঠছে। এবার কাঁথাস্টিচ শিল্পীদের নিয়ে নানা ভাবনাচিন্তা করছে প্রশাসন।
এবিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা শিল্পদপ্তরের ম্যানেজার অভিজিৎ কর বলেন, জেলার প্রায় ১০ হাজার মহিলা কাঁথাস্টিচ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। আউশগ্রামের কাঁথাস্টিচ শিল্পীদের জন্য খাদি বোর্ড থেকে একটি ক্লাস্টার গড়া হয়েছে। তাছাড়া শিল্পীদের তৈরি নানা সামগ্রী কলকাতা, মুম্বইয়ে প্রদর্শনী করা হবে, যাতে তাঁরা নিজেদের সামগ্রী সরাসরি বিক্রি করতে পারেন। তাঁদের তৈরি জিনিসের গুণগত মান আরও বাড়াতে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে।
আউশগ্রামের বহু মহিলা দীর্ঘদিন ধরে কাঁথাস্টিচ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। ওয়ারিশপুর, বননবগ্রাম, আলেফনগর, বাগরাই, আউশগ্রাম, সোমায়পুর, ভেদিয়া সহ নানা গ্রামের মহিলারা কাঁথাস্টিচের শাড়ি, পাঞ্জাবি, কূর্তি, বিছানার চাদর তৈরি করেন। কেউ মা-কাকিমার হাত ধরে শিখেছেন কাপড়ের উপর সুতোর নকশার এই কাজ। কেউ বিবাহ সূত্রে গ্রামে এসে পড়শিদের দেখেই শিখেছেন কাঁথাস্টিচের কাজ। ছুঁচ-সুতো নিয়ে বসে শাড়িতে নকশা ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা। তার ফাঁকেই চলে ছেলেমেয়েদের পড়ানো, সংসারের অন্যান্য কাজ। বেঙ্গালুরু সিল্ক বা তসরের একটি শাড়ির উপর নানা সূক্ষ্ম কারুকার্য ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা।
আউশগ্রামের শিল্পীদের হাতে তৈরি বিছানার চাদর, শাড়ি, পাঞ্জাবি সহ নানা কাঁথাস্টিচের নকশা করা পোশাক কলকাতা, বেঙ্গালুরু, মুম্বইতে বিক্রি হচ্ছে অনলাইনের উপর ভর করেই। এক একটি কাঁথাস্টিচের বিছানার চাদরের দাম ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার, এমনকী ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আউশগ্রামের ওয়ারিশপুরের শিল্পী তাহমিনা বেগম, সোহানা পারভিন বলেন, কাজের উপর দাম নির্ধারণ হয়। আগে আমরা বাজার পেতাম না। এখন আমরা কাজের মূল্য পাচ্ছি। সুতোর কাজের উপরে দাম ঠিক হয়। আমি একটা বিছানার চাদর ১৩, ১৪ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করেছি। আমার তৈরি বিছানার চাদর কলকাতা, বেঙ্গালুরু সহ লন্ডনেও পাড়ি দিয়েছে। তবে অন্য একজন আমাদের কাছ থেকে মাল নিয়ে বিদেশের মাটিতে নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি আমরা তা বিক্রি করতে পারি না।
আউশগ্রাম-১ বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, আউশগ্রামের মহিলাদের কাঁথাস্টিচের কাজ খুব ভালো। আমরা এর আগেও ওদের নিয়ে কাজ করেছি। এবার ওদের অনলাইনে মার্কেটিং সংস্থাগুলির সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।