‘শাড়ি খুলতে পারব না…’ গুরুতর অভিযোগ এনে দল ছাড়লেন শিল্পাঞ্চলের বিজেপি নেত্রী
‘শাড়ি খুলতে পারব না, পাত পেড়ে খাওয়াতে পারব না…বিজেপি এখন চোর, কয়লা মাফিয়া, জেলখাটাদের পার্টি’। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক পোস্ট করে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন আসানসোলের বিজেপি নেত্রী সুস্মিতা দাশগুপ্ত। বিজেপি কর্মী আক্রান্ত হলে যাঁকে হাসপাতালে দেখা যেত, গত বিধানসভা নির্বাচনেও আসানসোল দক্ষিণের দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে দাঁতে দাত চেপে যাঁকে লড়তে দেখা গিয়েছে, এহেন নেত্রীর দলের প্রতি এই বিষোদগারে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শিল্পাঞ্চলে। বিজেপি দলে মহিলাদের কী অবস্থা তা আরও একবার প্রকাশ্যে এল বলেই বিরোধীদের দাবি। দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেই তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ার নেত্রী বলে দায় এড়াতে মরিয়া বিজেপি শিবির। এমনকী শিল্পাঞ্চলে বিজেপির জেলা পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা হতেই দলের অন্দরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। একাধিক বিজেপি মণ্ডল সভাপতি জেলার উচ্চ পদাধিকারীদের নাম না করে কয়লা কারবারি, চিটফান্ডে অভিযুক্ত হিসেবে কটাক্ষ করেছেন। তাই ভিন রাজ্যে ব্যাপক সাফল্যের পরও শিল্পাঞ্চলে গেরুয়া শিবিরে অশান্তির মেঘ ক্রমশ ঘণীভূত হচ্ছে।
বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে বলেন, উনি আমাদের দলের কোনও পদে ছিলেন না। জেলায় ২২ জন পদাধিকারীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ ৪০০জন চাইছেন পদে থাকতে। সবাইকে তো নেওয়া সম্ভব নয়। যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরূপ মন্তব্য করছেন, তাঁদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। আমরা এখনই দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করতে চাই না। যেভাবে আমরা উত্তরপ্রদেশ সহ চার রাজ্যে জিতেছি, এখানে লোকসভা উপনির্বাচনেও সেভাবে বিপুল ভোটে জিতব। যদিও সুস্মিতাদেবী বলেন, আমি সোশ্যাল মিডিয়ার নেত্রী নাকি মাঠে ময়দানে থেকে সাত বছর ধরে পার্টি করছি সেটা আসানসোল, বার্নপুরের মানুষ জানেন। মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলাম। বাকি যা বলার আমি নিজের পোস্টেই লিখেছি। যাদের জেতানোরা জন্য প্রাণপাত করলাম, তারাও পাশে থাকল না।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের পর নতুন জেলা সভাপতি হলেও জেলা কমিটি বা জেলার সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেনি বিজেপি শিবির। পুর নির্বাচনের আগে তা ঘোষণা করলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হবে বলে অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন। বিধানসভার পর পুরভোটেও তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে বিপর্যয়ের মুখ দেখেছে বিজেপি। তারপর ফের জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে পুরনোদের ব্রাত্য রাখা হয়েছে বলে আদি বিজেপি নেতাকর্মীরা গুঞ্জন শুরু করেছেন। তারমধ্যেই মহিলা নেত্রীর এই বিস্ফোরক পোস্ট ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর চাপ বাড়িয়েছে।
এনিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী মিনতি হাজরা বলেন, বিজেপি দলে নেত্রী, মহিলা কর্মীদের কীভাবে দেখা হয় তা ওই পোস্ট থেকেই স্পষ্ট। আমরা জানি ওরা মহিলাদের সম্মান করতে জানে না। তা না হলে আমাদের মহিলা নেত্রীকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করতে পারে? সুস্মিতাদেবীর মতো দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত না নিলেও বারাবনির বিজেপি মণ্ডল সভাপতি রবিন সূত্রধর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, দু’একজন বাদ দিয়ে কমিটির সদস্যদের বিগত পাঁচবছরে অ্যাচিভমেন্ট কী? কয়লা চুরি করে জেল খাটা, চিটফান্ড কাণ্ডে জেল খাটা, এগুলো অ্যাচিভমেন্ট নয়। আরএক মণ্ডল সভাপতি সোমনাথ মুদি বলেন, জেলা কমিটি নাকি মণ্ডল কমিটি বুঝতে পারলাম না। তৃণমূল কংগ্রেস আসা নতুনদের নিয়ে কমিটি হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ক্ষোভপ্রকাশ হচ্ছে তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। ভিতরে দল আড়াআড়িভাবে ভেঙে গিয়েছে। বিক্ষুব্ধরা সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত।