ফসল তরতাজা রাখতে প্রাচীন মিশরীয় ধাঁচের ‘ফ্রিজ’ এবার বাংলায়! উদ্যোগ রাজ্যের
৪০ টাকায় ফ্রিজ! এমন ফ্রিজের আবিষ্কার হয়েছিল প্রাচীন আফ্রিকায়। আর এখন তা প্রয়োগ করে সুফল পাচ্ছে বাংলার কৃষক। কৃষকদের ফসল তরতাজা রাখতেই এই ‘ফ্রিজ’ তৈরির পরামর্শ দিচ্ছে মমতা সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তর। গরমের মরশুমে অল্পখরচে সব্জি রক্ষার এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে একাধিক জেলায়। রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তরের অধীনস্থ সুসংহত এলাকা উন্নয়ন পর্ষদ (সিএডিসি) এই কৌশলের কথা ছড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বীরভূমে এর প্রয়োগও শুরু হয়েছে। সিএডিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, এতে অধিকাংশ সব্জি অনায়াসে ২০ দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব।
ফ্রিজটি কেমন? এটি আসলে মাটির পাত্র। দু’টি প্রমাণ আকারের মাটির পাত্রকে বিশেষভাবে ব্যবহার করার মধ্যে দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাপমাত্রাকে। সোজা কথায়, কম উষ্ণতায় রাখা যায় সব্জিকে। এর ফলে শুকিয়ে যাওয়া বা পচে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচে সেই সব্জি। সিএডিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি প্রমাণ আকারের মাটির পাত্রের ভিতরে তুলনায় ছোট একটি মাটির পাত্র রাখা হয়। দু’টির মাঝখানের অংশে থাকে বালি। সেই বালি ভিজিয়ে দেওয়া হয় জল ঢেলে। এরপর একটি ভিজে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় দু’টি পাত্রকেই। ব্যাস, ফ্রিজ বা কুলিং সিস্টেট তৈরি। পরীক্ষামূলকভাবে তা করে দেখানো হয় সোনামুখীতে। এই সাফল্য দেখে সাড়া পড়েছে কৃষকমহলে। জেলায় জেলায় এই কৌশল ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে সিএডিসি। উৎসাহের বড় কারণ হল খরচ। দু’টি মাটির পাত্র আর বালি— সব মিলিয়ে মাঝারি মাপের কুলিং সিস্টেমের দাম পড়বে ৪০ টাকার কাছাকাছি। রাজ্যের পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, আমাদের সরকার কৃষকদরদি। আমরা নানাভাবে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ভাবি। সিএডিসি’র কর্তা তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের বিশেষ সচিব সৌম্যজিৎ দাস বলেন, কৃষককে আর মাঠ থেকে সব্জি তুলেই বাজারে পাঠাতে হবে না। আবার সতেজ রাখার জন্য হিমঘরে পাঠানোরও প্রয়োজন নেই। বরং সময়মতো বাজারজাত করার সুযোগ পাবেন কৃষক।
ইতিহাস বলে, খ্রীষ্টজন্মের আড়াই হাজার বছর আগে অধুনা মিশরে এই ধরনের কুলিং সিস্টেমের প্রয়োগ হতো। বাংলার ঘরে ঘরে জল ঠান্ডা রাখার জন্য যে কুঁজো ব্যবহার হয়, সেটাও সেই প্রাগৈতিহাসিক অধ্যায়ের একটি অংশ। বিংশ শতাব্দীতে উত্তর নাইজেরিয়ার বাসিন্দা মহম্মদ বাআবা নামে এক ব্যক্তি ওই পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। বর্তমানে আফ্রিকার প্রান্তিক এলাকায় এই পদ্ধতি ‘জির-পট’ নামে চর্চিত। সেই পদ্ধতিই এখন বাংলায় হিমঘরের ঘরোয়া বিকল্প হয়ে কৃষকবন্ধুর সম্মান পাচ্ছে।