লকডাউনে দিশেহারা বাংলা গান
বন্ধ মাচা থেকে শহরের কনসার্ট। রেকর্ডিং স্টুডিওয় সুর নেই। জমছে অন্ধকার। এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন। বাড়ছে লকডাউনের দিন। ফুরিয়ে আসছে সঞ্চয়। এই ইন্ডাস্ট্রির নেই কোনও ফেডারেশন বা গিল্ডও সক্রিয় নয়। এখানে একক ভাবে মানুষ আর তার দল গড়ে ওঠে। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি।
লকডাউনের জেরে আগামী এক বছর মুখ থুবড়ে পড়বে বাংলা গানের জগৎ, এমনটাই আশঙ্কা করছেন শিল্পীরা।
শান্তনু মৈত্রর মতে, ‘‘লকডাউনের পর জীবন স্বাভাবিক হলেও মাচা হবে না। কনসার্টে মানুষ গান শুনতে আসবে না। ওই সময় যন্ত্রশিল্পীদের জন্য সরকারকে এবং নামী শিল্পীদের এগিয়ে আসতেই হবে। নয়তো অনুষ্ঠান নির্ভর মিউজিশিয়ানরা বাঁচবেন না।”
ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে গান করছেন রূপঙ্কর। ফেসবুকেও একে অন্যকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে গান গাইছিলেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তিনি বললেন, “মানুষের হাতে গানের জন্য খরচ করার আর পয়সা থাকবে না। আগে ৩০টা অনুষ্ঠান হলে এ বার দশটা হবে। পারিশ্রমিক কমে যাবে।
যন্ত্রশিল্পীদের অবস্থা আরও খারাপ। শো নেই। তাঁদের টাকা নেই। অন্য শিল্পী দেখবো আমার চেয়ে কম টাকায় অনুষ্ঠান করে চলে যাবে। শো পাওয়া নিয়ে ভয়ঙ্কর খেয়োখেয়ি হবে শিল্পীদের মধ্যে। ভয়ঙ্কর সময় আসছে। ২০২১-এর পুজোর আগে বাংলা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।”
সঙ্গীতশিল্পী, লেখক, সুরকার অনুপম রায়ের মতে, “আমার কাছে মানুষের একটা প্রত্যাশা আছে। আমি ঘরে বসে রেকর্ডিং করে সেই খারাপ গান মানুষকে কোনও দিন শোনাবো না। স্টুডিও ইতিমধ্যেই ক্ষতির মুখ দেখছে। সিনেমা নেই। তাই সিনেমার কাজও নেই। অন্য দিকে যে মানুষ মাচায় বাঁশ বাঁধে, যে মানুষ অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে টাকা পায় তাদের অবস্থা আরও খারাপ!”
ইউটিউব কি আলো ফেলবে সুরের জগতে? অনুপম বললেন, “একেবারেই না। আমার গানের পরিচিতি আছে। কিছু টাকা পেয়েছি। ওই অবধি। নতুনদের এই সময় এখান থেকে খুব একটা রোজগার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি না কেউ সম্পূর্ণ বেসুরো কদর্য কিছু করে সকলের নজর কাড়ে। ইউটিউব আসলে খিচুড়ি প্ল্যাটফর্ম। আর এখন তো ইউটিউবে বিশ্বে মন্দার জন্য বিজ্ঞাপন নেই।”
রূপঙ্করও জানালেন, নিজের চ্যানেল থেকে দারুণ কিছু টাকা তিনি পাননি। ” পয়সা খরচ করে যত সংখ্যক ভিডিও কনটেন্ট নিয়মিত আপলোড করতে হয় তা এখন সম্ভব নয়,” সাফ জানালেন রূপঙ্কর।
তবে, বিপদ থাকলেও একঘেয়ে গৃহবন্দী জীবন থেকে মানুষ অবশেষে ফিরবে গানের কাছেই বিশ্বাস শিল্পীদের। গৃহবন্দী মানুষ গানেই মুক্তির পথ দেখবে।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার ডিজিটাল