রাজ্যের বস্ত্রশিল্পে হবে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেওয়া উদ্যোগের উপর ভর করে বড় সাফল্য আসতে চলেছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে। বাংলাকে শার্টিং-শ্যুটিংয়ের কাপড় উৎপাদনে স্বনির্ভর করতে কয়েক মাস আগেই ইনসেনটিভ স্কিম চালু করে রাজ্য সরকার। আগামী দু’বছরের মধ্যে রাজ্যে অন্তত আড়াই হাজার উন্নতমানের পাওয়ারলুম বসানোই লক্ষ্য মমতা সরকারের। তাতে বিনিয়োগ হবে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা। সৃষ্টি হবে লক্ষাধিক কর্মসংস্থান। ইতিমধ্যে ৮৩৯টি পাওয়ারলুম বসাতে চেয়ে আবেদন এসেছে রাজ্যের কাছে। এবার ইনসেটিভ স্কিমের সুবাদে প্রাথমিকভাবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে চলেছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে।
এই বিনিয়োগের মধ্যে দিয়েই জোয়ার আসবে রাজ্যের বস্ত্রশিল্পে। কারণ ইনসেনটিভ স্কিমের সুবিধা মেলায় উৎসাহিত বিনিয়োগকারীরা। জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০০টি উন্নতমানের পাওয়ারলুম বসতে চলেছে হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়ার তিনটি ইউনিটে। একেকটিতে থাকবে ৯৬টি করে পাওয়ারলুম। মেশিন পিছু দিনে তৈরি হবে অন্তত ৪০০ মিটার কাপড়। অর্থাৎ তিনটি ইউনিটে প্রতিদিন উৎপাদন হবে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মিটার কাপড়।
প্রসঙ্গত, রাজ্যকে এই ক্ষেত্রে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ শুরু হয় স্কুল পড়ুয়াদের ইউনিফর্ম তৈরির সিদ্ধান্তকে ঘিরে। তবে এখন আর এই উদ্যোগ শুধুমাত্র স্কুল পড়ুয়াদের ইউনিফর্ম তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। আগামী দু’বছরের মধ্যে বাংলায় যে আড়াই হাজার উন্নতমানের পাওয়ারলুম বসানো হবে, তাতে স্কুল পড়ুয়াদের পোশাকের জন্য বছরে ছ’কোটি মিটারের অনেক বেশি কাপড় উৎপাদন হবে। তখন শার্টিং-শ্যুটিংয়ের কাপড় রপ্তানি করতে পারবে রাজ্য, জানিয়েছেন রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
ইনসেনটিভ স্কিমের আওতায় পাওয়ারলুম বসানোর জন্য জমি কিনলে রেজিস্ট্রি ফি মকুব করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। লাগবে না স্ট্যাম্প ডিউটিও। আবার যে মূলধনী খরচ হবে, তার ২০ শতাংশ ইনসেনটিভ হিসেবে দেবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, পাওয়ারলুম ইউনিটগুলিকে কাপড় তৈরির জন্য সুতোর জোগানও দেবে রাজ্য সরকারের সংস্থা তন্তুজ। এই কাঁচামালের জন্য ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিতে হবে পাওয়ারলুম মালিকদের। এই ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির হার মাত্র ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে রাজ্য। এ ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থা, টেক্সটাইল ডিরেক্টরেট, তন্তুজ এবং ব্যাঙ্কের মধ্যে।
সূত্রের খবর, এই বিনিয়োগের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু হবে উৎপাদন। এই ইনসেনটিভ স্কিমের বড় সাফল্য হিসেবে বাণিজ্য সম্মেলনে এই তিনটি সংস্থার হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হবে রাজ্যের তরফ থেকে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে আগে শুধু শাড়ি ও ধুতি বোনার মেশিন ছিল। যে কারণে বাংলায় শার্টিং-শ্যুটিংয়ের কাপড় উৎপাদন হতো না। তৃতীয়বার সরকারে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে রাজ্যকে শ্যুটিং-শার্টিংয়ের কাপড় উৎপাদনে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেন। এর ফলে অনেক তাঁতি ‘পুরনো পাওয়ারলুম’ কিনে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। যার নিট ফল, ইতিমধ্যেই রাজ্যে অন্তত সাড়ে চার লক্ষ মিটার শার্টিং-শ্যুটিংয়ের কাপড় উৎপাদন হয়েছে।