জেলা ধরে ধরে প্রশাসনিক প্রধানদের ঠিকমত কাজ করতে কড়া বার্তা মমতার
রাজ্যে সাম্প্রতিক কালে ঘটা একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসনকে একাধিক নির্দেশ দিলেন মু্খ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাদ যাননি জেলাশাসকেরাও। নরমে-গরমে বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক প্রধানদেরও ‘কাজ’ বুঝিয়েছেন মমতা। বুধবার নবান্ন থেকে প্রশাসনিক বৈঠক করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের প্রতিটি জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি জোর দেন, জেলার ডিএম ও এসপিদের মধ্যে সুসম্পর্কের উপর। ‘‘পূর্ব মেদিনীপুরে এই সমস্যা আছে,’’— বলেন মুখ্যমন্ত্রী। হলদিয়া ও দিঘা, দুর্গাচক-সহ সমগ্র জেলায় আগামী দিনে শিল্প স্থাপনের কাজ হবে। এই পরিস্থিতিতে ডিএম ও এসপির মধ্যে ভাল সম্পর্ক রেখে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ তাঁর। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কোমল এবং সেই জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের সঙ্গে। জেলার পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তিনি জানান, জেলাশাসক মাঝেমাঝেই সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও)-এর কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। পাশাপাশি, জেলা পরিষদের কাজের দিকেও ডিএমদের নজর রাখার নির্দেশ দেন মমতা। এই সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ তিনি পেয়েছেন বলে জানিয়ে রশ্মিকে বলেন, ‘‘আমাকে তোমার আগে অভিযোগের কথা জানানো উচিত ছিল।’’ তবে ঠিক কোন প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলছেন, তা খোলসা করেননি।
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নজরে বাঁকুড়া। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘বাঁকুড়ায় কি ডিএম-এসপির কোনও প্রবলেম হচ্ছে?’’ তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ারকে বলেন, ‘‘বাঁকুড়ায় ডিএমের বিরুদ্ধে কেউ কেউ কমপ্লেন করছে। আমার সন্দেহ আছে, আদৌ অভিযোগগুলো ঠিক না ভুল। কিন্তু অভিযোগ আসছে। দেখে নাও অভিযোগের সারবত্তা আছে কি না। আমি ডিএমকেই দায়িত্বটা দিচ্ছি।’’
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘তুমি তো আগে খুব প্রো-অ্যাকটিভ ছিলে, এখন কী হল তোমার? যখন তুমি বাঁকুড়ায় ছিলে কত কাজ করতে। আমার মনে হচ্ছে, তুমি একটু ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে গিয়েছো।’’ তার পরই মুখ্যমন্ত্রী রসিকতার সুরে বলেন, ‘‘আসলে এখানে আবহাওয়াটা ভাল তো, তাই সৌন্দর্য দেখছে। তুমি একটু কাজের সৌন্দর্য দেখো ভাল করে।’’
এর পর দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক আয়েষা রানিকে মমতা বলেন, ‘‘তুমি তো কাজ জানো। তোমাকে নতুন করে কাজ মনে করানোর কোনও দরকার নেই। ভাল করে কাজ কর।’’
হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্যার সঙ্গেও কথা প্রসঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত খোঁজখবর নিতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। মমতাই জানান, মুক্তার ভাইয়ের অকালমৃত্যুর কথা। এ বিষয়ে তাঁকে সমবেদনাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে কখনও বকুনি, আবার কখনও মমতায় বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।