রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

করোনা, লকডাউনে ধান সংগ্রহের রেকর্ড রাজ্যে

June 24, 2020 | 2 min read

লকডাউনের কারণে বহু কৃষকের আর্থিক অবস্থা খারাপ। ঘরে ধান মজুত না-করে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁদের অনেকেই। আবার করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে বহু ফড়ে এ বার গ্রামে ঢুকতে পারেনি। যার ফলে এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহে সর্বকালীন রেকর্ড গড়তে চলেছে রাজ্য সরকার।

নবান্ন সূত্রের খবর, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ইতিমধ্যেই রাজ্য প্রায় ৪৩ লক্ষ ৯০ হাজার টন ধান কিনেছে। নবান্ন আশা করছে, জুলাই মাসের শেষে সেটা ৫০ লক্ষ টনে পৌঁছবে। এর আগে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৩৯.৮৬ লক্ষ টন ধান কিনেছিল রাজ্য খাদ্য দপ্তর।

খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, লকডাউনের কারণে গ্রামের কৃষকদের একটা বড় অংশের আর্থিক অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে, মজুত না-করে তাঁরা ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির জন্য ফড়েরা এ বার বহু গ্রামে ঢুকতে পারেনি। এমনকী, যে সব কৃষক আগে কখনও সাধারণত ফড়েদের ছাড়া ধান বিক্রি করতেন না, তাঁরাও এ বার সরকারকে ধান বিক্রি করছেন। কোনও কোনও কৃষক আধ বস্তা ধান নিয়েও সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছেন।

ধান সংগ্রহ

ইচ্ছুক বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকে খাদ্য দপ্তরের ‘অন্নদাত্রী’ অ্যাপের সাহায্য নিচ্ছেন। ধান বিক্রি করতে চাইলে এই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কৃষক আবেদন করতে পারেন। অ্যাপের তথ্য ধরে সেই গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে ভ্রাম্যমান গাড়ি। ধানের সরকারি ক্রয়কেন্দ্র কিংবা কিষান মান্ডিতেও শিবির করে ধান কেনার কাজ চলছে পুরোদমে। ধানের সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে প্রতি কুইন্টাল ধানের দাম ১৮৩৫ টাকা। আর ভ্রাম্যমান গাড়িতে ধান বিক্রি করলে দাম মিলছে কুইন্টাল প্রতি ১৮১৫ টাকা।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বছর আমরা মোট ৪৬ লক্ষ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলাম। সেই লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে যাবে। লকডাউনের সময়ে মানুষ বিনা পয়সায় রেশনের চাল পাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার মতো টাকা নেই অনেকের কাছে। তাই, বাড়িতে যে টুকু ধান মজুত আছে, বাধ্য হয়ে তাঁরা সেই সবটাই বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন।’ জ্যোতিপ্রিয়র কথায়, ‘আমরাও যতটা পারা যায়, তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি। চাষিরা ধান বিক্রি করা মাত্রই তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ খাদ্যমন্ত্রী জানান, এফসিআইয়ের ৬ লক্ষ টন ধান সংগ্রহ করার কথা ছিল, তবে সেই জায়গায় তারা মাত্র ৫০ হাজার টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে। কৃষকদের স্বার্থে বাকি সাড়ে পাঁচ লক্ষ টন ধান রাজ্য সরকারই সংগ্রহ করবে বলে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

খাদ্য দপ্তরের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, খাদ্যসাথী প্রকল্প, মিড-ডে মিল, আইসিডিএস স্কুলের চালের চাহিদা মেটানোর পরও সরকারি গুদামে প্রতি বছর চাল উদ্বৃত্ত থেকে যায়। কিন্তু এই বছর করোনা ও লকডাউনের জন্য রাজ্য সরকার ছ’মাস বিনামূল্যে চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ভিন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যেও চাল বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ফলে খাদ্য দপ্তরকে যে পরিমাণ চালের জোগান দিতে হচ্ছে, তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টন ধান উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশই বোরো ধান। গত বছর রাজ্য খাদ্য দপ্তর প্রায় ৩৪ লক্ষ টন ধান কিনেছিল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #covid19, #Lockdown, #Record collection of paddy

আরো দেখুন