করোনা টেস্টিংয়ের জন্য প্রবেশ করতেই হেনস্থা স্বাস্থ্যকর্মীদের
এলাকায় করোনা টেস্টিংয়ের জন্য প্রবেশ করতেই স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চড়াও হোন স্থানীয়রা। হেনস্থার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর কাশি-হাঁচি করে, অভব্য ব্যবহার করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল কেরালার তিরুভন্তপুরমের পুন্থুরা গ্রামের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিদর্শন ও এলাকাবাসীদের সোয়াব টেস্ট করার জন্য যান। প্রসঙ্গত, পুন্থুরা গ্রামে এখনও পর্যন্ত মোট ২০০জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত বলে খবর। এলাকায় সংক্রমণের সুপার স্প্রেড ঠেকাতেই ওই এলাকায় মানুষদের সচেতনতা ও পরীক্ষা করার কাজে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু শুক্রবার সকালে এলাকায় সরকারি গাড়ি ঢুকতেই তার উপর চড়াও হোন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, যাঁদের করোনা সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তাঁরা কেউই সংক্রামিত নন। তাঁদের বাড়ি ফেরানোর দাবিতেই এই বিক্ষোভ বলে জানা গিয়েছে।
শুক্রবার সকালে, কড়া লকডাউনকে উপেক্ষা করেই সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের সামনে একত্রে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা। তাঁরা ঝামেলা করে বলতে থাকেন, এলাকায় করোনা নিয়ে সরকারি তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। প্রসঙ্গত, সামাজিক দূরত্ব শিকেয় তুলে বিক্ষোভকারীরা নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে মুখেও দেননি মাস্ক। ফলে বিষয়টি বেশ জটিল থেকে আরও জটিলতর হয়ে যায়।
জানা গিয়েছে, চারজনের একটি দল নিয়ে গ্রামের মানুষদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য গিয়েছিলেন ড. দ্যুতি হরিপ্রসাদ। মূলত এলাকাবাসীদের সোয়াব টেস্টর জন্যই গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাঁরা। তাঁর মতে, রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে গ্রামবাসীরা গাড়ির উপর চড়াও হন। লকডাউনের প্রোটোকল তো দূর, স্থানীয়রা নূন্যতম মাস্ক না পরেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। গ্রামের মধ্যেই রয়েছে আয়ূষ ক্লিনিক। সেখানে পৌঁছে দেখেন, ক্লিনিকের গেটে তালা দেওয়া। সেখানে পুলিশেরও দেখা পাওয়া যায়নি। নিরাশ হয়ে ফেরার পথে ফের একবার গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মধ্যে পড়েন তাঁরা।
ওই চিকিত্সক জানিয়েছেন, ‘আমরা বুঝতে পারছিলাম, বেশ বড়সর বিপদের মধ্যে পড়ে গিয়েছি। গাড়ির চারপাশে প্রায় ৬০-৭০জন মহিলা-পুরুষের জটলা ছিল। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা গাড়ির উপর ধাক্কা মারতে থাকে আমাদের লক্ষ্য করে অকথ্য গালিগালাজও করেন তাঁরা। প্রথমে টনক নড়েনি কারোরই, পরে যখন সকলে বুঝতে পারেন যে আমার একটি মেডিক্যাল টিম ছিলাম, তখনও ক্ষোভ আরও বেড়ে ওঠে।’
‘তাঁদের বক্তব্য, আমরা একটা ভুল রোগ নিয়ে মাতামাতি করছি। আর সংক্রমিতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটাও ভুল। হাসপাতালে যাঁরা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানায় তাঁরা। তাঁদের বিশ্বাস, চিকিত্সাধীনরা মোটে করোনায় আক্রান্ত নন। গতিবিধি সামলাতে গাড়ির চালক জানলার কাঁচ অল্প নামাতেই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন গাড়ির ভিতর মুখ ঢুকিয়ে আমাদের উপর কাশি-হাঁচি করে দেন। সেইসময় ওই গ্রামবাসী বতে থাকেন, আমারও ওই রোগ রয়েছে, আপনাদেরও থাকাটা জরুরি। ‘
এমন ঘটনায় অত্যন্ত আতঙ্কগ্রস্ত গাড়ির মধ্যে উপস্থিত নার্সরা কান্নাকাটি জুড়ে দেন। ড. দ্যুতি আরও জানিয়েছেন, ‘ওই বিক্ষোভের মধ্যে থেকে অনেকেই বলতে থাকেন, গাড়ি দাঁড় করিয়ে ভিতরে যেকজন আছে, তাঁদের ধরে আয়ূষ ক্নিনিকের ভিতর আটকে রাখা দরকার। আমরা আতঙ্কে গাড়ির ভিতরই চুপচাপ বসে ছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম কখন মিডিয়ার লোকজন আসবেন। কিন্তু বেগতিক দেখে তাঁদের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে হাতজোর করে কাকুতিমিনতি করতে বাধ্য হয়েছিলাম। ‘
‘তারপর গ্রামবাসীদের কী মনে হল, আমাদের ছেড়ে দিলেন সকলে। আতঙ্ক, মৃত্যুভয় নিয়েই উপকূলবর্তী স্পেশালিটি হাসপাতালে ফিরে আসি। গোটা ঘটনার অভিজ্ঞতা উপরমহলে জানাই। তাঁরাই জেলাস্তরের মেডিক্যাল অফিসারের কাছে অভিযোগ জানান।’ আপাতত ওই স্বাস্থ্যকর্মীর দলকে সাতদিনের কোয়ারানটিনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতদিনের মাথায় তাঁদের করোনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
এ বছরেই রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগে যোগ দিয়েছেন চিকিত্সক দ্যুতি। মানুষের সেবা করতে গিয়ে এমন চরম অভিজ্ঞতার শিকার হতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমার মনে হয় না, ওই এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি ছাড়া আমাদের কাজ করা সম্ভব হবে।’