বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

ছবি বিশ্বাস – বাংলা সিনেমার অবিস্মরণীয় ‘তারকা’

July 11, 2020 | 2 min read

বাংলা সিনেমার অবিস্মরণীয় ‘তারকা’

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শুধু অভিনয় নয়, বড় মনের মানুষ ছিলেন ছবি বিশ্বাস। রাজা শশাঙ্ক দেবের উত্তর পুরুষ শচীন্দ্রনাথ দে বিশ্বাস কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯০২ সালের ১৩ জুলাই। ছোটবেলায় তাঁকে দেখতে সুন্দর ছিল বলে মা তাঁকে ‘ছবি’ বলে ডাকতেন। আর সেই ছবি নামটিই চলচ্চিত্র জগতে পরে সুপরিচিত হয়ে উঠেছিল। 

ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। বাড়ির হলঘরে পর্দা টাঙিয়ে চলত অভিনয়। অভিনয়ে আসার আগে যাত্রা করতেন ছবি বিশ্বাস। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে শিশির ভাদুড়ির অভিনয় দেখে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বাছার সিদ্ধান্ত নেন। শ্রী রঙ্গম মঞ্চে শিশির ভাদুড়ির নাটক যখন তেমন চলছিল না, সে সময় বিনা পারিশ্রমিকে শ্রী রঙ্গম মঞ্চে অভিনয় করতে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি।

কালী ফিল্মসের প্রতিষ্ঠাতা পি এন গঙ্গোপাধ্যায় ছবি বিশ্বাসকে অভিনয় জগতে প্রথম সুযোগ দেন। ১৯৩৬ সালে অন্নপূর্ণার মন্দির ছবির হাত ধরেই বড়পর্দায় প্রথম অভিনয় তাঁর। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে ছবি বিশ্বাস কাজ করেছেন একাধিক ছবিতে। তার মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন “জলসাঘর”, “কাঞ্চনজঙ্ঘা” ও “দেবী” ছবিতে। তাঁর অভিনয় যে ছবির মান বহুগুণ বাড়িয়ে তুলত তা বহুবার স্বীকার করেছেন খোদ সত্যজিৎ রায়। 

বলিউডে অভিনয়ের একাধিক প্রস্তাব পেলেও বারবার তা ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। রাজ কাপুর “একদিন রাত্রে” সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ছবি বিশ্বাসকে মুম্বই নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি রাজি হননি। এরপর কলকাতায় পুরো ইউনিট এনে ছবি বিশ্বাসের অংশটুকু শুটিং করে নিয়ে যান রাজ কাপুর। 

মদন মিত্র লেনে নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের বাড়ির বৈঠকখানায় ছিল ‘বারবেলা বৈঠক ক্লাব’। এখানে হত সখের অভিনয়। সম্ভবত এই ক্লাবে যোগদানের মাধ্যমেই ছবি বিশ্বাসের অভিনয় জীবনের হাতেখড়ি। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউ হলে নানা সুধীজন আসতেন। সেখানেই ছবি বিশ্বাস পরিচিত হলেন শিশিরকুমার ভাদুড়ির সঙ্গে। নিয়মিত না শিখলেও নিজেকে মনে করতেন শিশিরকুমারের শিষ্য। 

‘নদের নিমাই’, ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু’, ‘সখের চোর’, ‘শিউলিবাড়ি’, ‘রাজা সাজা’, ‘আম্রপালী’, ‘বিচারক’, ‘সপ্তপদী’, ‘নীলাচলে মহাপ্রভু’-সহ প্রায় ২৫৬টি বাংলা চলচ্চিত্র ও তিনটি হিন্দী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ‘জলসাঘর’-এর জন্য ৫৫ বছরের প্রৌঢ়কে ঘোড়ায় চড়া রপ্ত করতে দিন সাতেক রাইডিং স্কুলে এক ঘণ্টা করে যেতে হয়েছিল। নিখুঁত অভিনেতা ছিলেন বলেই তা রপ্ত করতে পেরেছিলেন ছবিবাবু।

‘দেবী’ ছবির শ্যুটিঙে বেশি আঠা দিয়ে কিছুতেই গোঁফ লাগাতে চাননি তিনি। তাঁর স্কিন বড় ডেলিকেট যে। শোনা যায়, বেশি সাঁটাসাঁটি করলে ঠিক অভিনয়টি হবে না— এমন মন্তব্যও করতে ছাড়েননি স্পষ্টভাষী ছবিবাবু। আর ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় মূর্তিমান কাঞ্চনজঙ্ঘার মতোই যে শেষ দিনটি পর্যন্ত অবিচল রইল, সে কথা বাঙালী মাত্রেই জানে।

চলচ্চিত্র মাধ্যমে পোশাকে-চলনে-বলনে একটা পরিবর্তন এনেছিলেন ছবিবাবু। উত্তমকুমারের ধুতির ডিজাইন নিজেই কারিগরকে দিয়ে করিয়েছিলেন ছবি বিশ্বাস। উত্তমের গ্ল্যামারের সঙ্গে মানানসই সেই ধুতি পরে ‘উত্তমকুমারের ধুতি’ নামে পরিচিত হয়েছিল।

ছবি বিশ্বাস মনে করতেন অভিনয় শিল্পে কলাকুশলীদের ভূমিকাই মুখ্য। নিজে অভিনেতা হয়েও মনে করতেন সিনেমার আয়ের অংশ কলাকুশলীদের মধ্যে আগে ভাগ করে দেওয়া উচিত, অভিনেতারা নেবেন সকলের শেষে। যে কোনও আন্দোলনে তিনি থাকতেন সকলের আগে।

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মৃত্যুর পর মন্তব্য করেছিলেন, ছবিদা চলে গেলেন। এ বার থেকে ব্যারিস্টারের চরিত্রগুলো কেটে মোক্তারের চরিত্র করতে হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bengali Movie, #chobi biswas

আরো দেখুন