সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই তারা মায়ের দর্শন চলছে তারাপীঠে
সংক্রমণ এড়াতে ঘটা করে প্রবেশদ্বারগুলিতে বসানো হয়েছিল স্যানিটাইজার টানেল। এছাড়াও দূরত্ব বিধি মেনে ছোঁয়াচ এড়ানোর সবরকম ব্যবস্থা রেখে ২৩ জুন থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল তারাপীঠ মন্দির। কিন্তু, এক মাস যেতে না যেতেই জীবাণুমুক্ত করার সেই ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তিনটির মধ্যে দু’টি স্যানিটাইজার টানেল দিন কয়েক ধরেই বিকল হয়ে রয়েছে। তেমনই শিকেয় উঠেছে সামাজিক দূরত্ব বিধিও। এদিকে, প্রতিনিয়ত রাজ্য ছাড়াও ভিন রাজ্যের পুণ্যার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন এই সিদ্ধপীঠে। স্বভাবতই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
জানা গিয়েছে, মন্দিরের তিনটি প্রবেশদ্বারে জীবাণুমুক্ত করার জন্য টানেল বসানো হয়। যার মধ্যে দু’টি পুণ্যার্থীদের জন্য এবং তৃতীয়টি সেবাইতদের ব্যবহারের জন্য রাখা হয়। সেই টানেল দিয়েই মুখে মাস্ক পরে সকলকে প্রবেশ করার কথা ঘোষণা করা হয়। যাতে ভিন জেলা বা রাজ্য থেকে আসা পুণ্যার্থীদের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু, দু’টি টানেল বিকল হয়ে পড়ে থাকায় অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
সেবাইতদের একাংশ জানান, প্রতিদিনই ভোর থেকে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকছে। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। কিন্তু, দু’টি টানেল বিকল হয়ে রয়েছে। এদিকে, করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই ঝড়ের গতিতে বেড়ে চলেছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। তারাপীঠ মন্দির চত্বর খুবই ঘিঞ্জি ও জনবহুল এলাকা। সেখানে বহিরাগতদের ঠিকমতো জীবাণুমুক্ত করা না হলে গোটা এলাকা সংক্রামিত হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে যেমন মন্দির কমিটির দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, তেমনই কোনও সেবাইত আক্রান্ত হলে বন্ধ হয়ে যাবে মন্দির।
এদিন মন্দির গিয়ে দেখা গেল, সামাজিক দূরত্ব বিধিও মানা হচ্ছে না। গর্ভগৃহের সামনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে মায়ের কাছে প্রার্থনা করছেন ভক্তরা। ভিড় নিয়ন্ত্রণে থাকা সিকিউরিটি কর্মীদেরও দেখা নেই। অনেকে সেই ভিড় এড়াতে নাট মন্দির থেকে মায়ের উদ্দেশে কামনা জানিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাওড়া থেকে আসা সুরঞ্জন সাঁতরা বলেন, সংক্রমণ এড়াতে মন্দির কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা জানার পরই তারাপীঠে এসেছি। কিন্তু, এসে দেখছি, স্যানিটাইজার টানেল বিকল। সামাজিক দূরত্ব বিধিও মানা হচ্ছে না। এত ভিড়ে কে করোনার বাহক, তা জানা সম্ভব নয়। তাই নাট মন্দির থেকেই মাকে দর্শন করে হোটেল ফিরে যাচ্ছি। তবে গেটে থার্মাল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে।
এব্যাপারে মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, খারাপ টানেল দু’টির বিষয়ে সরবরাহকারী সংস্থাকে জানানো হয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন এলাকা কন্টেইনমেন্ট জোনে থাকায় সংস্থার কর্মীরা আসতে পারছেন না। তবে আগামী বৃহস্পতিবার তাঁরা আসবেন বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া গর্ভগৃহের সামনে যাঁরা ভিড় করছেন, তাঁরা অনেকেই একই পরিবারের সদস্য। সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য সিকিউরিটিদের বলেছি।
এদিন শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার হওয়ায় মন্দির চত্বরে থাকা চন্দ্রচূড় শিব মন্দিরে স্থানীয়দের ভিড় ছিল যথেষ্ট। সেখানেও সামাজিক দূরত্ব বিধি নিয়ন্ত্রণে কাউকে দেখা যায়নি। অন্যদিকে, সংক্রমণ রোধে চরণামৃত ও কপালে তিলক দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ করেছে মন্দির কমিটি। কিন্তু, সে সবও মানা হচ্ছে না। ফলে বহিরাগতদের আনাগোনায় এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারাপীঠবাসী।