সিবিআই’কে ভয় পান না, সত্যের পাশেই থাকবেন সত্যপাল, জানালেন টুইটারে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মোদী জমানায় জম্মু ও কাশ্মীর-সহ একাধিক রাজ্যের রাজ্যপালের পদে থেকেছেন সত্যপাল মালিক। এবার তাঁকে সমন পাঠাল সিবিআই! আগামী ২৮ এপ্রিল তাঁকে সিবিআই দপ্তরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মোদী জমানায় জম্মু-কাশ্মীর-সহ চারটি রাজ্যের রাজ্যপালের পদে থাকা বিজেপি নেতা সত্যপাল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ তুলেছেন, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে পুলওয়ামায় সিআরপি-র কনভয়ে জঙ্গি হানায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যুর পরে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। কারণ, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গাফিলতি, নিরাপত্তায় ফাঁক থাকার ফলেই কনভয়ে হামলা হয়েছে। কিন্তু সত্যপালের দাবি, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, এটা অন্য বিষয়। সত্যপাল যেন মুখ বন্ধ রাখেন।
ওই সাক্ষাৎকারেই সত্যপাল আভাস দিয়েছিলেন, পুলওয়ামায় জওয়ানদের মৃত্যুকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগানো হয়ে থাকতে পারে। ঘটনাচক্রে, গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘প্রথম বারের ভোটারদের বলছি, আপনাদের প্রথম ভোট পুলওয়ামায় যে সব বীর শহিদ হয়েছেন, তাঁদের নামে সমর্পিত হতে পারে!’’
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এরপরই সত্যপালকে সমন পাঠাল সিবিআই। সংবাদ সংস্থা পিটিআই’কে সত্যপাল জানিয়েছেন, দিল্লির আকবর রোড গেস্টহাউসের কেন্দ্রীয় এজেন্সির দপ্তরে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। কিছু বিষয় নিয়ে সিবিআই আধিকারিকদের ধোঁয়াশা রয়েছে। সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতেই ২৮ এপ্রিল তলব। আপাতত তিনি রাজস্থানে যাচ্ছেন। তাই সিবিআইকে ২৭ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে সময় দিয়েছিলেন।
রিলায়েন্সের বিমা দুর্নীতিতে ৩০০ কোটির ঘুষ মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের সরকারি কর্মীদের জন্য একটি মেডিক্যাল স্কিম চালু করে রিলায়েন্স। এই মামলায় অনিল আম্বানির রিলায়েন্স জেনারেল বিমা এবং ত্রিনিতি রিইনসিওরেন্স ব্রোকারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। ২০১৮ সালে সেখানকার রাজ্যপাল থাকাকালীন তিনি সেই সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করেছিলেন সত্যপাল। বিমা স্কিমটিতে গরমিলের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। তারপরই গোটা বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
যে বিমা কেলেঙ্কারির মামলায় সিবিআই তাঁকে তলব করেছে, সাক্ষাৎকারে সে প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেছিলেন সত্যপাল। প্রধানমন্ত্রী মোদী দুর্নীতিকে তেমন কিছু ঘৃণা করে না বলেও দাবি করে তিনি জানান, বিজেপি এবং আরএসএস নেতা রাম মাধব তাঁর কাছে জম্মু-কাশ্মীরের সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার বিমা প্রকল্পের হয়ে সওয়াল করতে এসেছিলেন। ওই বেসরকারি সংস্থার স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পে সরকারি কর্মচারীদের বছরে ৮,৫০০ টাকা, অবসরপ্রাপ্তদের ২০ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছিল। তাতে সকলেই অখুশি ছিলেন। তাই তিনি ওই প্রকল্প বাতিল করে দেন। প্রকল্পে ছাড়পত্র দিলে ১৫০ কোটি টাকা ঘুষ মিলত বলেও তাঁকে জানানো হয়েছিল।
দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে অনেকেই এই বিষয়ে বলছেন, গোটা দেশে সিবিআই, ইডি’কে ব্যবহার করে বিজেপি যে ভাবে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছে সত্যপাল মালিককেও সেরকমভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। কারণ, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে যে ভাবে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন, তাতে চিন্তায় পরে গেছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে বিষয়টিকে বিরোধীরা যে হাতিয়ার করতে পারে তা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছে। তাই সত্যপাল মালিকে এবার সিবিআই দিয়ে ডেকে পাঠানো হল।
এদিকে সিবিআইয়ের সমন পাওয়ার পরেই সত্যপাল মালিক টুইট করে লেখেন, আমি সত্যটা বলে কিছু মানুষের পাপের কথাকে ফাঁস করে দেব। আমি কৃষকের সন্তান। আমি কাউকে ভয় পাই না। আমি সত্যের পাশে থাকবই।