পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

বাংলার দুগ্গা পুজো: জেনে নিন দশঘরা বিশ্বাস বাড়ির পুজোর ইতিহাস

September 22, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শোনা যায়, একসময়ে এই বাড়ির দেবীকে ৪০ ভরি গয়নায় সাজানো হত। এছাড়াও এই বাড়ির ঠাকুর দালানে সাজানো হত ১০৮ টি করে মোট ৩২৪ টি প্রদীপ। হুগলির দশঘরার বিশ্বাসবাড়ির পুজো ঘিরে রয়েছে বহু অজানা তথ্য।

No photo description available.

আগে হরিদ্বারে দশঘরার দেববিশ্বাস পরিবারের বসবাস ছিল। সেখান থেকে ওড়িশা হয়ে বাংলায় আসে তারা। বলা হয় জগমোহন বিশ্বাস নামে এই পরিবারের এক বিত্তশালী ব্যক্তি দশঘরায় জমিদারির পত্তন করেছিলেন। ১০টি বিরাট গ্রাম নিয়ে তাঁর জমিদারি ছিল। আবার অনেকের মতে, জগমোহন বিশ্বাসের প্রপিতামহ ছিলেন জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বাসদের টেরাকোটার পঞ্চরত্ন মন্দিরটি দেখার মতো। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে সদানন্দ বিশ্বাস মন্দিরটির প্রতিষ্ঠিত হয়। মন্দিরের কষ্টিপাথরের গোপীনাথ জিউ আর অষ্টধাতুর রাধারানিকে নিত্যপুজো করা হয়।

এই মন্দিরের মূর্তিগুলো ঘিরে প্রচলিত রয়েছে সুন্দর এক গল্প । নিধিরাম দেব বিশ্বাস নামে এই পরিবারের এক ছেলে খুব অল্পবয়সে মারা যান। শোকে-দুঃখে তাঁর মা যখন প্রায় উন্মাদিনী, সেই সময় হরিদ্বারের এক যোগীর কাছ থেকে বিগ্রহ দু’টি নিয়ে আসা হয়। বিগ্রহ দু’টিকে সন্তানস্নেহে আঁকড়ে ধরেন নিধিরামের মা। সুস্থও হয়ে ওঠেন দ্রুত। এর পর ধুমধাম করে পুজো শুরু হয় গোপীনাথ জিউয়ের।

No photo description available.
No photo description available.

এই বাড়িতে একসময় প্রতি বছর দেবী চণ্ডীর পুজো হত। কিন্তু চণ্ডী আর গোপীনাথ জিউয়ের পুজো একসঙ্গে এক বাড়িতে করতে নারাজ পুরোহিতরা। তখন চণ্ডীপুজো বন্ধ করে দিয়ে চণ্ডীমণ্ডপ অন্যস্থানে আনা হয়। পরে সেইখানে দুর্গাদালান তৈরি করে সূচনা হয় দুর্গাপুজোর।

No photo description available.

এই রাজবাড়ির কাঠামো পুজো হয় উল্টোরথের দিন। মহালয়ার পরের দিন বোধন হয়। চণ্ডীবেদীতে দেবীর বোধনের পর শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। পঞ্চমীর দিন দেবীকে সাজানো হয়। রাজ আমলে প্রায় ৪০ ভরির গয়না পরানো হত দেবীকে। ঢাল, তরোয়াল সবই ছিল রূপোর। দেবীর চার হাত। ডান হাতে থাকে বল্লম, বাঁ হাতে সাপ। আর থাকে ঢাল তরোয়াল। একচালার মূর্তিতে কার্তিক গণেশের মূর্তি থাকে ওপরে, দুর্গার দুই পাশে। লক্ষ্মী সরস্বতী থাকেন চালার নীচের দিকে। এই বাড়ির গণেশঠাকুর নির্মিত হয় ওড়িশি কায়দায়। ষষ্ঠীর দিন বিল্ববরণ হয়। সপ্তমীর দিন কলাবউ স্নান করানোর পর দেবীর চক্ষুদান করা হয়। পুজো শুরু হলে এই বাড়ির ৩ বংশের ৩ জন গৃহলক্ষ্মীকে দুর্গাদালানে নিয়ে এসে দেবীর পাশে রাখা হয়। দুর্গার সঙ্গে সঙ্গে পুজোর দিনগুলিতে পূজিত হন এঁরাও। অষ্টমীর দিন তিন পরিবারের মঙ্গলার্থে ১০৮টি করে মোট ৩২৪টি প্রদীপ সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হয় ঠাকুরদালানে।

No photo description available.

দশমীর দিন দুপুরে বাড়ির সদস্যরা বাড়ির গোপীনাথ মন্দির, রাসমঞ্চ, দোলমন্দির, দুর্গাদালান ঘুরে সব দেব দেবীর আশীর্বাদ নেন। পরিবারের লোকেদের বিশ্বাস এই আচার পালন করলে সারা বছরের সব বিঘ্ন কেটে যাবে। সন্ধ্যাবেলা বরণ এবং সিঁদুর খেলার পর দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয় বাড়ির সামনের গোপীসাগর দিঘিতে। কিছু দিন পর সেই কাঠামো পুকুর থেকে তুলে পরিষ্কার করে তুলে রাখা হয়। পরের বছর সেই কাঠামোতেই পুজো করা হয়।

No photo description available.

বিশ্বাস বাড়িতে এখন‌ও বলিপ্রথা বর্তমান। পুজোর ৩ দিন পাঁঠা বলি হয়। এ ছাড়াও নবমীর দিন আঁখ, ছাঁচিকুমড়ো, লেবু বলি দেওয়া হয়। পুজো শাক্ত মতে হয় বলে প্রতি দিন পুজো শুরুর একটু আগেই গোপীনাথ জিউ এবং রাধারানির মূর্তি পুজো করে তাঁদের কানে তুলো দিয়ে শয়ন করিয়ে দেওয়া হয়। পুজোর সময় বন্ধ থাকে মন্দিরের দুয়ার। বিশ্বাসবাড়িতে প্রতি দিন ঠাকুরকে ৩০ থেকে ৪০ রকমের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোর সময় এক মন চালের নৈবেদ্য হয়। এছাড়াও থাকে বিভিন্ন রকম ফল, ক্ষীর, ছানা, দই, লুচি, বাতাসা, সন্দেশ।

পথ নির্দেশ:

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Durga Puja Celebration, #Dasghara Biswas Bari

আরো দেখুন