কেউকেটা নন, বাড়ির দুর্গাপুজোয় প্রণব ছিলেন ঘরের ছেলে
বীরভূমের লাভপুর থানার মিরাটি গ্রাম। এ গ্রামেই মুখোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি। প্রণব মুখোপাধ্যায় এ পরিবারের মানুষ ছিলেন। বাড়ির উঠোনে চালা বেঁধে সেখানে দুর্গাপুজা শুরু করেছিলেন কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়। সেই রেশ ধরে এখনও চলছে পুজো । প্রণব মুখোপাধ্যায় সারা বছর যেখানেই থাকুন পুজোর সময় মিরাটি গ্রামে চলে আসতেন। নিজে পুজোয় অংশ নিতেন। উপবাস করে নিজে চণ্ডীপাঠ করতেন। কোনও বছর তার অন্যথা হয়নি।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে থেকে তিনি যেমন পুজোয় আসতেন তেমন অতিথি অভ্যাগতদের ভিড় উপচে পড়ত। জেলার একদম প্রান্তিক এলাকার ঐ গ্রামে পুলিসের হিমশিম অবস্থা হতো নিরাপত্তার বন্দোবস্ত তকতে। প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর স্মৃতিচারণায় বহুবার বলেছেন, পুজোর সময়ে তাঁরা ঘট ভরতেন বাড়ির সামনের ছোট খাল থেকে। সে খাল বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ নিত। এখনও সেখান থেকে ঘট ভরে পুজোর প্রথা চালু আছে।
মিরাটি গ্রামের সাধারণ মানুষজন কৃষিজীবি! সেই গ্রামের সাধারণ মানুষজনও গ্রামের একমাত্র পুজো – মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজোয় শামিল হন। খুব জাঁকজমক কোনোকালেই নেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বাড়ির পুজোয়। সাদামাটা অনুষ্ঠান। ডাকের সাজের প্রতিমা, বাড়ির উঠোনে পুজো। নেই থিম বা মণ্ডপ বা বাহারি আলোর খেলা। উঠোনেই ঢাক বাজে, মানুষজন সেখানেই প্রণাম করে যান।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও পুজো চালিয়ে গেছেন মুখোপাধ্যায় পরিবার। প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তখন এই পুজোতে আসতেন দেশের অনেক শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রী আবার কংগ্রেসের নেতা হিসেবে তাঁর পুজোতে সামিল হতে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমানের কংগ্রেস নেতা কর্মীরা। পুজো শেষে দলের জেলার নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভাও করতে হত প্রণব মুখোপাধ্যায়কে।
সেই মুখোপাধ্যায় পরিবারে এবার বিষাদের সুর, প্রয়াত হয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।