নির্বাচনী ট্রাস্টে লাভবান হয়েছে বিজেপি, ফুলেফেপে উঠেছে নরেন্দ্র মোদীর দলের কোষাগার
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সম্প্রতি নির্বাচনী বন্ডকে বাতিল করে ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গেই নির্বাচনী ট্রাস্টকে নির্বাচনী বন্ডের বিকল্প হিসাবে উল্লেখ করেছে। কিন্তু তার আগেই অবশ্য এই খাতে ৬,৫০০ কোটি টাকা ঢুকে গিয়েছে বিজেপির অ্যাকাউন্টে। শুধু বন্ড নয়, ইউপিএ আমলে চালু হওয়া নির্বাচনী ট্রাস্ট থেকেও সমান ফায়দা লুটেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল। গত ১০ বছরে এই খাতে তাদের প্রাপ্তির অঙ্কটা ১,৮৯৩ কোটি।
২০১৩ সালে কার্যকর হয় প্রকল্পটি। এটির অধীনে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে একটি করে নির্বাচনী ট্রাস্ট গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে অনুদান দিতে পারে বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানি। সংগৃহীত অর্থ বছর শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে চাঁদা হিসেবে প্রদান করা যায়। কারা কত টাকা ওই ট্রাস্টে জমা দিয়েছে, সেই পরিসংখ্যান প্রতি বছর জমা দিতে হয় নির্বাচন কমিশনে। কিন্তু কোন পার্টি কার কাছ থেকে কত পেল, তা জানা যায় না। প্রথম বছরে অবশ্য প্রায় সমান টাকা পেয়েছিল কংগ্রেস ও বিজেপি। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে মোদী সরকার গঠনের পর নির্বাচনী ট্রাস্ট থেকে গেরুয়া শিবির পায় ১১০ কোটি। কংগ্রেসের ভাগ্যে জোটে মাত্র ১৮ কোটি। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে এই খাতে বিজেপির অনুদান বেড়ে হয় ২৮১ কোটি। কংগ্রেস পেয়েছিল ৯.৪ কোটি এবং তৃণমূল মাত্র ৫০ লক্ষ । সেই বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে মোদীর দলের প্রাপ্ত ভোটের হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। আর্থিক বছর শেষের আগে ভোট হয়েছিল পাঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং মণিপুরে। চারটিতেই জয়ী হয় এনডিএ। সেবছর নির্বাচনী ট্রাস্টে সবথেকে বেশি, ৪৫ কোটি টাকা দিয়েছিল ডিএলএফ গোষ্ঠী।
২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে এই খাতে বিজেপির আয় ছিল ১৭০ কোটি। কংগ্রেস পায় মাত্র ১০ কোটি। সে বছর হিমাচল, গুজরাত, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডে বিধানসভা ভোট ছিল। সর্বত্র জয়ী হয় গেরুয়া শিবির। সেবারও বৃহত্তম অনুদানদাতা ডিএলএফ গোষ্ঠী (৫২ কোটি)। পরবর্তী অর্থবর্ষেই রাজনৈতিক দলগুলির কর্পোরেট অনুদানে নিয়ন্ত্রণ জারি করে মোদী সরকার। বিজ্ঞপ্তি জারি হয় নির্বাচনী বন্ডেরও। তবু ট্রাস্ট থেকে বিজেপির টাকা পাওয়া কমেনি। ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে তাদের প্রাপ্তি হয় ১১০ কোটি। রাহুল গান্ধীর দল পায় ৪৩ কোটি। গত লোকসভা নির্বাচনের বছরে ট্রাস্ট থেকে ৩১৫ কোটি আয় করে মোদীর পার্টি।
২০২০ সালের পর থেকে কেবলমাত্র একটি নির্বাচনী ট্রাস্ট সচল রয়েছে। পরবর্তী অর্থবর্ষগুলিতে সেটি থেকে যথাক্রমে ২০৯ কোটি, ৩৩৭ কোটি এবং ২৫৬ কোটি টাকা পেয়েছে গেরুয়া শিবির। শেষ বছর কংগ্রেস এক টাকাও পায়নি। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ওই ট্রাস্টে সবথেকে বেশি অনুদান দিয়েছে দু’টি সংস্থা মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (৮৭ কোটি) এবং কোভিড টিকার অন্যতম নির্মাতা সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (৫০ কোটি)। অর্থাৎ পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার, ভোটের সঙ্গে অনুদানের যোগাযোগ অত্যন্ত নিবিড়।